বিপর্যয়ে রাজনৈতিক ব্যাংকগুলো

বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলোর অবস্থা সঙ্গিন হয়ে পড়েছে। প্রকাশ-তাসের ঘরের মতো একের পর এক ভেঙে পড়ছে এসব ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ৯টির মধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে। এখন এসব ব্যাংকের কোনোটির খেলাপি ঋণ ৮৬ থেকে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা এসব ব্যাংক অনুমোদনের আগেই বিরোধিতা করেছিলেন; কিন্তু সরকার তখন তা আমলে নেয়নি। প্রসঙ্গত, নতুন ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বিগত স্বৈরাচার সরকার। ব্যাংকগুলো হলো-পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোয় লুটপাটের যে চিত্র প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, এক কথায় তা কল্পকাহিনিকেও হার মানায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অসীম শঠতার নজির গড়ে তারা সেটাই করেছে। বস্তুত দেশের ব্যাংক খাত এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছিলো, এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে; একইসঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিও হবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই অনিয়ম দূর করে খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষের আরও বেশি কঠোর হওয়া প্রয়োজন। দুঃখজনক হচ্ছে, বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংকগুলোর কর্তৃত্ব তাদেরই মনোনীতদের হাতে ছিল। এরা পরিচালকের পদে বসে ঋণের নামে অর্থ লোপাট ও পাচারের মাধ্যম হিসাবে ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হয়নি, সাধারণ মানুষের আমানতও খেয়ানত করেছে। এমনকি এসব অর্থের কিয়দংশ রাজনৈতিক কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে। আর এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে পরামর্শদাতা, কার্য সম্পাদনকারী তথা কুশীলব হিসাবে সে সময়ে দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্টদের অনেকেই জড়িত ছিলেন বলে তথ্য মিলেছে।
আশার কথা, দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংক খাতের অনিয়ম বন্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সুশাসন ফেরাতে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে, তদন্তও চলমান। যথাসম্ভব ঋণ আদায়ের চেষ্টাও চলছে। তবে বড় ঋণ খেলাপিসহ যারা ব্যাংকটির মালিকানা নিয়ে যথেচ্ছ লুটপাট ও পাচারে জড়িয়ে ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় এনে অর্থ আদায় করাটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। আবার ব্যাংক খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কারও জরুরি। এজন্য যারা তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থিক খাতের এসব কুশীলবের অনেকেই নিজেদের ভোল পালটে বহাল তবিয়তে যার যার দায়িত্বে আছেন। কিন্তু তাদের কুপরামর্শ ও উৎসাহ যে লুটপাটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তা বলাই বাহুল্য। তাদের চিহ্নিত করা না গেলে পরবর্তীকালে যারা ক্ষমতায় থাকবেন, তাদেরও পদস্খলনের প্রলোভন তারা দেখাবে। খেলাপি ঋণ আদায় এবং দায়ী ব্যক্তিদের পাশাপাশি এসব কুশীলবের দিকেও সরকার দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More