জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করেছে সরকার। ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমানোর সিদ্ধান্তের কারণে পুনরায় লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং কখন হবে, তা আগে থেকে গ্রাহককে জানানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় দেশজুড়ে লোডশেডিং কার্যকর হলে শিল্প খাতে যে প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী? চলতি মাসের প্রথমদিকে হঠাৎ দেশব্যাপী তীব্র লোডশেডিং শুরু হয়েছিলো। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না বলে এ সংকটের সৃষ্টি। পরে গ্যাসের জোগান বৃদ্ধি পেলে লোডশেডিংয়ের তীব্রতাও কমে আসে। ঈদুল আজহার সময় দেশে লোডশেডিং ছিলো কিছুটা সহনীয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। বিভিন্ন অফিসের কিছু কাজ ভার্চুয়ালি পরিচালনা করা সম্ভব। তবে হোম অফিস করার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা দেশের কতো শতাংশ কর্মীর আছে? বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত কতোটা লাভবান হওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কাজেই সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করা হলেও দ্রুত এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করা দরকার।
জানা গেছে, দেশে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৪০ থেকে ৫৩ টাকা। অথচ গড়ে প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৫ পয়সা। এছাড়া এলএনজিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি ব্যয় হয় ১০ টাকা, কয়লায় ৪ টাকা, সোলারে ১২ টাকা; ফার্নেস অয়েলে ১২ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় হয় ৬ টাকা। কাজেই সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছে। দেশে গ্যাসের সংকট শুরু হওয়ার পরও সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়নি।
বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, আমরা এখনো কয়লা ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে অনেক পিছিয়ে আছি। জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষ্ঠু ও সাশ্রয়ী ব্যবহার করা দরকার। একইসঙ্গে অপচয় রোধ করে জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। দেশে প্রতিদিন কী পরিমাণ গ্যাস চুরি হচ্ছে, তাও বারবার আলোচনায় আসে। প্রশ্ন হলো, যারা মূল্যবান গ্যাস চুরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
চলমান জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে নেয়া সরকারের পদক্ষেপগুলো বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জ্বালানি খাতের কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি এ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। ইতোমধ্যে এ খাতে যেসব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সময়ে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃচ্ছ্রসাধনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে দেশের মানুষ তাদের কথা বহুদিন মনে রাখবে।