বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। জনগণের বৃহদাংশই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কৃষকের মনে স্বস্তি না থাকলে সেটি সার্বিক অর্থেই উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। অথচ ফসলের ভরপুর ফলনে চাষির ঘরে আনন্দ থাকার কথা। শুধু ফুলকপি কিংবা আলু নয়; বাঁধাকপি, মুলা, শিমসহ আরও কয়েকটি সবজির দাম কৃষক পর্যায়ে তলানিতে এসে ঠেকেছে। বছরের পর বছর যে কোনো ফসলের দর না পেয়ে কৃষকের খেদোক্তিরও শেষ নেই। দামের এ অবস্থা থেকে কৃষককে বের করতে সরকারের নেই তেমন কার্যকর উদ্যোগ এটাও আলোচনায় আসছে।
কৃষকের বাম্পার ফলনের পরও দাম না পাওয়ার কারণ কী-এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। দাম নিয়ে কৃষকের খেদের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সমন্বয় না থাকা, সিন্ডিকেটের কারসাজি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব, কোল্ডস্টোরেজ সংকট, প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকা, বাজার ব্যবস্থাপনায় নীতিমালার অভাব, রপ্তানিতে বাধা, মূল্য কমিশন গঠন না করা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ব্যর্থতায় দাম নিয়ে কৃষকের এমন দুর্গতি বছর বছর হচ্ছেই। এছাড়া, ভেজাল বীজ, নিম্নমানের সার, ডিলারের কারসাজি, কৃষিঋণে ভোগান্তি, প্রণোদনায় স্থানীয় প্রভাবশালীর দাপট, কীটনাশকের চড়া দর, সেচের গ্যাঁড়াকলে পড়ে শুরু থেকেই চাষবাসে পিছিয়ে পড়েন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা। সেখানে যোগ হয় বাম্পার ফলনের চাপে দামে ধস! ফলে, বিশ্লেষকরা যে বিষয়গুলো তুলে ধরছেন তা বিবেচনায় নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কৃষক ফসল ফলাবে কিন্তু ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ। এর প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এই অসংগঠিত কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য কীভাবে পাবেন-সেই আলোচনা দীর্ঘদিনের। কিন্তু সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নেই। এমনকি কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের অনেক সংস্থা থাকলেও তাদের নেই কার্যকর পদক্ষেপ, এটাও আলোচিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রতিযোগিতা কমিশনের সব পরিচালক একযোগে পদ ছাড়েন। এরপর থেকে এই কমিশনের কাজ থমকে গেছে বলেও জানা যায়। তাই, সর্বাত্মক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। লক্ষণীয়, হাতবদলের কারণে দাম বাড়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। অন্যদিকে, কৃষক বঞ্চিত। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, হাতবদলে দাম বাড়ার প্রবণতা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে তারা কাজ করছেন-যা ইতিবাচক।
প্রসঙ্গত, ফসলের উৎপাদনে অগ্রগতি হলেও কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ; এটাও আমলে নেয়া দরকার। রপ্তানি প্রক্রিয়া, বাণিজ্যিকীকরণ ও বহুমুখীকরণে গতি নেই। পর্যাপ্ত প্যাকেজিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণেরও সুযোগ নেই। সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহ প্রক্রিয়ায় দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদিত ফসলের একটা অংশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে, ক্ষতির মুখে পড়ছেন উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা-এই বিষয়গুলোও বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, কৃষক যদি ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, তা পরিতাপের। সংকট নিরসনে সব ধরনের পদক্ষেপ জরুরি। অনেক কৃষক ঋণ করেও ফসল ফলান। দামের কারণে অনেকের উৎপাদন খরচও ওঠে না। ফলে, নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন তারা। ফসল চাষে আগ্রহ হারান। এই দিকগুলোও খেয়াল করতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক এটাই প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More