কাতারের দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দলের ফাইনাল ম্যাচের মধ্যদিয়ে শেষ হলো গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ-বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞ ফিফা বিশ্বকাপ। অংশগ্রহণকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে এ বিশ্বকাপ ফুটবলের সম্পর্কটা ছিলো বরাবরের মতোই আবেগঘন। কখনো কখনো সে আবেগ মাত্রা ছাড়িয়েছে অবশ্য। সেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দেশের মানুষ মোটা দাগে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল শিবিরে বিভক্ত হয়ে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো নিজেদের মধ্যে। এর একটা মনস্তাত্ত্বিক দিকও রয়েছে সম্ভবত। সবাই একপক্ষ হয়ে গেলে আনন্দ জমে না, কাউকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিলে মজাটা নেয়া যায় ভালো। ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয়ায় ফাইনালে সবার দৃষ্টি ছিলো আর্জেন্টিনার দিকে। শেষ পর্যন্ত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় ফাইনালে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ী হলো আর্জেন্টিনা। রুদ্ধশ্বাস এ খেলার প্রতিটি মুহূর্ত ছিলো আকর্ষণীয় ও উত্তেজনায় ভরপুর। অনেকের মতে, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা ফাইনাল এটি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হলেও ফুটবল-জাদুকর লিওনেল মেসির নেতৃত্বে যোগ্যতার দল হিসেবেই শিরোপা জিতেছে আর্জেন্টিনা। প্রকৃতপক্ষে জয় হয়েছে ফুটবলের। সেরা খেলায়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন মেসি। অভিনন্দন আর্জেন্টিনা।
এবারের বিশ্বকাপের আয়োজনটি কেমন হলো? সার্বিক আয়োজন হয়তো ভালোই হয়েছে। কোনো অঘটন ঘটেনি। এবার বিশ্বকাপে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো দিক হলো ফুটবলে পিছিয়ে থাকা এশিয়া মহাদেশ থেকে কয়েকটি দেশের উঠে আসা। বিশেষ করে জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবের উত্থান লক্ষ্য করার মতো। আফ্রিকার দেশ মরক্কো তো বিশ্ব ফুটবল শক্তিগুলোর সঙ্গে সমান তালে খেলে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিলো। সাধারণভাবে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকাকেই ফুটবল শক্তির মূলকেন্দ্র বিবেচনা করা হয়। এবার বিশ্ব ফুটবলে এক ধরনের শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার যে লক্ষণ দেখা গেছে সেটা আশাব্যঞ্জক।
আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়-বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ এলে এ প্রশ্ন ওঠে বারবার। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আমরা কি কেবল মাতামাতি করবো? আমাদের নিজেদের কবে ওই পর্যায়ে যাওয়ার যোগ্যতা হবে? ফুটবল এ দেশেও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। একসময় ঢাকার ক্লাবভিত্তিক ফুটবল লিগ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো। এ নিয়ে মাতামাতিও কম হতো না। এখন সেই উৎসাহে ভাটা পড়েছে। যতো বড় টুর্নামেন্টই হোক, ফুটবল স্টেডিয়াম থাকে ফাঁকা। এখন মাতামাতি হয় ক্রিকেট নিয়ে। সন্দেহ নেই, দেশের ক্রিকেটের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হওয়াই এর কারণ। ক্রিকেট আমাদের অনেক সুনাম এনে দিয়েছে, এটিও সত্য। কিন্তু তাই বলে ফুটবল উপেক্ষিত থাকতে পারে না। ফুটবল আমজনতার খেলা। এর মানোন্নয়নে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন ঘরোয়া ফুটবলের জনপ্রিয়তা আবার ফিরিয়ে আনা। আমরা আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করব আর ঘরোয়া ফুটবলকে নিচে নামিয়ে রাখব-এটি হতে পারে না। দেশে ফুটবলের মানোন্নয়নে সব ধরনের প্রয়াস নিতে হবে। চেষ্টা ও উদ্যোগে সবই সম্ভব। একদিন আমরাও বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবো। তখন আর অন্য দেশের পতাকা নয়, সবার বাড়িতে উড়বে জাতীয় পতাকা। এ স্বপ্ন দেখতে দোষ কী! মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।