পূর্ণ উদ্যমে শুরু হোক পুলিশের কার্যক্রম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মাঠপর্যায়ের ১২৭জন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের, সাধের বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে দলবদ্ধ খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে হবে। দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে। দেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুলিশ। সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না। পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটি শব্দ বলছি আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে কার্যকর করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক ও নাগরিকের অধিকারের কিছুই থাকে না।’
প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। পুলিশ পুরোপুরি সক্রিয় না থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী হয়, তার বাস্তব প্রমাণ পাচ্ছে দেশবাসী। বস্তুত দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এর কারণ গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুলিশের কার্যক্রম এখনো পূর্ণ উদ্যমে শুরু না হওয়া। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থামাতে স্বৈরাচার সরকার ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অনেককে হত্যা করার পর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুলিশের ‘চেইন অব কমান্ড’। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পুলিশের শীর্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় রদবদলের পর এখনো পুরো উদ্যম ফিরে পায়নি বাহিনীটি। এখনো পুলিশের মনোবলে ঘাটতি রয়ে গেছে। এসব কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। প্রায় প্রকাশ্যে ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। পুলিশের সংস্কারের জন্য সরকার গঠিত কমিশন কাজ শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই, করে ফেলতে হবে।’ বস্তুত সংস্কারের মধ্য দিয়ে এক নতুন পুলিশ বাহিনী দেখতে পাবে এ দেশের মানুষ, এটাই সবাই আশা করছে।
পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির মাধ্যমে সততার সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর ব্যত্যয় ঘটলে এ বাহিনীর শুধু ভাবমূর্তিই ক্ষুণœ হবে না, কার্যকর ভূমিকা পালনও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে পুলিশকে। এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানারকমের সমস্যা হবে, চাপ আসবে। অনেকে ডেসপারেট হয়ে যাবে আমার কেন্দ্রে জিতাতে হবে, ওর কেন্দ্রে জিতাতে হবে। সেখানে পুলিশ আইন মানতে চাইলে তারা খেপাখেপি করবে। আমাদের সেখানে শক্ত থাকতে হবে, আইনের ভেতরে থাকতে হবে।’ ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তা যথাযথভাবে অনুধাবন করবেন, এটাই কাম্য।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More