গত ২৫ জুন শনিবার বাংলাদেশের বৃহৎ ও লাখো মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগযোগের এক নতুন যুগ সূচিত হয়েছে। তবে তা সহজে হয়নি, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষের আবেগ আতিশয্যকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে গতকাল কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা দেখে মনে হয়েছে, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। একটি ঘটনায় দেখা গেলো এক ব্যক্তি পদ্মা সেতুতে গিয়ে রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে চাঞ্চ্যলকর তথ্য পাওয়া পেয়েছে। নিশ্চিত করেই বলা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা সেতু এলাকা এখন অনেকটা অস্বাভাবিক চেহারা নিলেও সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। মোটরবাইক নিষিদ্ধ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যে হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধিতাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে থেকে ষড়যন্ত্রে যুক্ত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন প্রশ্নে স্বতঃপ্রণোদিত রুল শুনানির জন্য উঠলে আদালত এমন মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে আদালত বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় সম্পদ, জাতীয় উন্নয়ন। আমাদের অহংকার। জাতীয় স্বার্থে পদ্মা সেতু। বিরোধিতাকারীরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা থাকেন, তারা জাতির ও দেশের শত্রু। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
এরপর আদালত আজ মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য দিন রেখেছেন। তার আগে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল, দুদক কৌঁসুলিসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর বক্তব্য শুনবেন বলে জানিয়েছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে ছিলেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন গত রোববার বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তখন আদালত জানান, বিষয়টি সোমবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি ওঠে।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান, বিচার দাবি’ শিরোনামে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদন নজরে এলে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। রুলে পদ্মা সেতুর নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে থেকে ষড়যন্ত্রে যুক্ত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ প্রেক্ষাপটে কমিশন গঠন ও কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে এর অগ্রগতিও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানাতে বলা হয়। আমরা মনে করি, স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন এই পদ্মা সেতু নির্মাণ। মহান মুক্তিযুদ্ধচলাকালে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করেছে। এখন আবার একইভাবে পদ্মা সেতুর মত অর্জনকে ধরে রাখতে দেশি-বিদেশি শত্রুদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেননা মুক্তিযুদ্ধের পর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সঠিকভাবে প্রতিহত করা যায়নি বলে আমরা ৭৫’এর পর বহু বছর পিছিয়ে পড়েছিলাম। সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে আজকের বাংলাদেশ এবং আজকের বাংলাদেশ নিয়েও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এখনই এসব বিষয়ে সজাগ হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।