নির্বাচন নিয়ে সব পক্ষের ঐকমত্যের বিকল্প নেই

জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি তাদের অবস্থান জানিয়ে বলেছে, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে। অবশ্য বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে লক্ষ্য থাকলেও নির্বাচন কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের পরে যাবে না। এটা পুরো জাতির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার। অবশ্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তারা সংস্কারের বিপক্ষে নয়, তবে সবকিছুর মূলে জনগণ। তাই জনগণের সম্মতিতেই যেন সব হয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা, যাতে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করা অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন প্রথম পর্যায়ে সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চায়। সেই মতামতের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কমিশন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করবে আর এর ভিত্তিতেই হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রস্তুতির স্বার্থে সরকারের এ উদ্যোগ ব্যতিক্রমী ও ইতিবাচক। বলার অপেক্ষা রাখে না, যত দ্রুত দেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হবে, জাতির জন্য তা তত কল্যাণকর হবে। এটা সত্য, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সেটির স্পষ্ট সময়সীমা থাকা দরকার। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তী সরকারকে তা চূড়ান্ত করতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, সময় যত এগোচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা ভালো লক্ষণ নয়। এই মতপার্থক্য দূর করতে সব পক্ষকেই সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে, আলোচনার টেবিলকে বেছে নিতে হবে এবং তা জাতির গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার স্বার্থেই। আশার কথা, গেল বুধবার ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে করার লক্ষ্য সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে লিখিত কর্মপরিকল্পনা জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। আর আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে একটি নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা ধরে ইসি এগোচ্ছে। ইসির এ কর্মপরিকল্পনা সফল করতে সব রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, তা বলাই বাহুল্য। কোনো মতপার্থক্য নয়, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More