বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং বাজার সংস্কৃতিরই অংশ। আবারও বেড়েছে চালের দাম। সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। এর চাপ পড়ছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মিলারদের কারসাজি। মিলার পর্যায়ে দাম বাড়ানোর ফলে স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। সরু চালের পাশাপাশি মোটা চালের দামও বাড়ানো হয়েছে। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অশুভ বার্তা। প্রথমে করোনা এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে স্বল্প আয়ের মানুষ এমনিতেই পরিবারের সব ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের অনেকে ঋণ করে ব্যয় মেটাতে বাধ্য হচ্ছে। যদি চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়, তাহলে সীমিত ও দরিদ্র পরিবারে কী দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। এ দুর্ভোগ দীর্ঘ সময় চললে এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, অনেক পরিবারের শিশুদের শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে। কাজেই চালসহ নিত্যপণ্যের বাজারে যেন অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে
মূলত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের জবাবদিহির মধ্যে নেই। যে কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে। এ ছাড়া বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। হঠাৎ করে সব ধরনের পণ্যের দাম অধিকমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। যেমন বিপাকে পড়েছে ভোজ্যতেল নিয়ে। আটা ময়দার দাম বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বেকারি পণ্যের দামও।
আসলে পণ্যের সরবরাহ বা সংকটের সঙ্গে দাম বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা হচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীদের হীনমানসিকতা। অতীতেও আমরা লক্ষ্য করেছি, তারা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কেটেছে এবং দু’বছর আগেও পেঁয়াজের কেজি হয়েছিল ২৫০ টাকা। একইভাবে তারা চিনির দামও বাড়িয়েছিল। আর চালের দাম তো নানা অজুহাতে কয়েক দফা বাড়লো। এটা তাদের ব্যবসায়িক অসুস্থ সংস্কৃতি। এটা হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি। এরা জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রুত ধনী হবে এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। ফলে তাদের কাছে দেশের অসহায় জনগণ জিম্মি হয়ে পড়ে। ক্ষেত্র বিশেষ সরকারও তাদের কাছে জিম্মি। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতোদিন না ঘটবে ততোদিন চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে।