পুরোনোকে বিদায় জানানোর মধ্যদিয়ে আরও একটি নতুন বছর আমাদের দ্বারে এসেছে। নতুন বছরে নতুন দিন আসে, আমরা উদ্দীপিত ও জাগ্রত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকারও এর মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেয়াই মানুষের সহজাত প্রবণতা। প্রতি বছর নতুন বছরকে বরণ করতে আমরা উল্লসিত। প্রসঙ্গত, দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেই বছরটি কেমন গেল তার হিসাবনিকাশ সবাই করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, আমাদের জাতীয় জীবনে ২০২৩ সালটি ছিল একটি ঘটনাবহুল বছর। এ বছরটিতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট-অস্থিরতা যেমন ছিল, তেমনি আমাদের বেশকিছু অর্জনও ছিল।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছরে এসে এ বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। আগের দুই দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার পর এপ্রিলে তৃতীয় দফায় উদ্যোগ নেয় চীন। কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে বাংলাদেশকে চাপ দেয়। এরকম নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে চলতি বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। ২০২৩ সালের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। এছাড়া ২০২৩ সালে বেশ কিছু ভূমিকম্পের ঘটনা উঠে এসেছে সংবাদের শিরোনামে। ৬ ফেব্র¤œয়ারি সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কাছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ধরে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্ক ও সিরিয়া মিলে মৃত্যু হয় ৫০,০০০ এর বেশি মানুষের।
বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছে ২০২৩ সাল। এ বছর মানবাধিকার ও নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন ছিল আলোচনার বিষয়। এছাড়া পুরো বছরজুড়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিতে সরগরম ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।
নিতপ্যণের মূল্য, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভসহ নানা কিছু আলোচনায় আসে। ডেঙ্গুজ্বর শহরের সমস্যা ছিল দীর্ঘদিন। যা শুধু বর্ষা মৌসুমেই থাকত। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গু শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামেও। অন্যদিকে, বিদায়ী বছরে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান দেশে আসে সেপ্টেম্বরে। যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় ৫ অক্টোবর। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন।
এ বছরই টানেল যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। ২৮ অক্টোবর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের রেলযোগাযোগেও নবযাত্রা ছিল এবার। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু হয়েছে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের পুরোটা সচল হয়েছে। যা শহরের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে। এবারই ঢাকা প্রথমবারের মতো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শহরে পরিণত হয়েছে। বছরের শেষে এসে সমুদ্রবন্দর ঘিরেও আশা-জাগানিয়া ব্যাপার রয়েছে। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় সৌদি আরবের একটি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সর্বোপরি বলতে চাই, প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশের গুণী ব্যক্তিদের হারিয়েছি- যা গভীর বেদনাবহ। এ ছাড়া ২০২৩ সালটিতেও বাজার অস্থিরতা, হত্যাকা-, দুর্ঘটনায় মত্যু, ধর্ষণসহ নানা ধরনের ঘটনা আলোচনায় আসে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে আগামী দিন যেন সুন্দর হয়, মানুষের অপরাধপ্রবণতা রোধ হয় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। হ্যাপি নিউ ইয়ার।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.