জনমানুষের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে গত শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করেছে তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ঘটা করেই দলটির শীর্ষ পদগুলোয় মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়। মূলত জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্ররা এ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। তরুণদের এ নতুন রাজনৈতিক দলের ১৫১ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসাবে রয়েছেন নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব পদে আখতার হোসেন। প্রকাশ পেয়েছে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ আট নেতৃত্বের নামও। সেখানে প্রধান সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ছাড়াও রয়েছেন আব্দুল হান্নান মাসউদ, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ। তরুণদের নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক, সরকারের সাবেক আমলা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ পরিবারের সদস্য এবং আহত যোদ্ধারা। এছাড়া আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের প্রতিনিধি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেন গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করা নানা শ্রেণি-পেশার নির্যাতিত ছাত্র-জনতাও। নতুন রাজনৈতিক দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘জুলাই স্পিরিট’ সামনে রেখে আগামী প্রজন্মকে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ উপহার দেওয়ায় তাদের লক্ষ্য। অধিকার ও মর্যাদাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি হত্যা, গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করতে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গেলো জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার সঙ্গে সব মত-পথ ও দলের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন; নতুন দলটিতে সেই নেতাকর্মীদের একটি অংশ যুক্ত হচ্ছেন। ফলে বলা যেতে পারে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারা থেকে আসা ব্যক্তিরা এখানে যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে আদর্শভিত্তিক আলাদা আলাদা দল থাকলেও একই দলে সব আদর্শের সম্মিলন যে সেভাবে দেখা যায় না, তা বলাই বাহুল্য। এতে দলটিতে নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বহু চিন্তার সম্মিলন ঘটনার সুযোগ রয়েছে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, নতুন দল হিসাবে তাদের নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হবে। মতবিরোধ কিংবা বিভক্তির পুরোনো কৌশল ছাড়াও জনগণের সেবা করার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার নানা ষড়যন্ত্র ও প্রলোভন সামনে আসতে পারে। সে সবকিছুকে বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারলে দলটির প্রতি মানুষের সমর্থন অর্জন করা খুব একটা কঠিন হবে না।
আমাদের প্রত্যাশা, তরুণদের এ দল দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সমর্থ হবে। তরুণ নেতাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এদেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করবে। ইতঃপূর্বে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে প্রবল আদর্শিক বৈরিতার চিত্র আমরা দেখেছি, জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই ধারা থেকে মুক্ত থেকে দেশের স্বার্থকে সবার উপরে রাখার মানসিকতার পরিচয় দেবে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে; কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে ‘শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা’ এমন মানসিকতার পরিচয় তারা দেবে না, এ প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। ক্ষমতা কিংবা কর্তৃত্বের উদ্দেশ্যে নয়, দেশ ও জনগণের কল্যাণে জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশে সু-রাজনৈতিক ধারার সূচনা করবে, এটাই প্রত্যাশা।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.