দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা। এসব দুর্ঘটনার বড় অংশজুড়েই থাকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এ বছরের জানুয়ারির এক মাসেই ঘটে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা; যেখানে মারা যান ৫৮৫ জন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে এক-চতুর্থাংশের অধিক ছিলো বাইক দুর্ঘটনা। চলতি মাসেই ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২০৫ জন। তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই বাইক আরোহী। গত বছর দেশে ৬ হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মোট ৭ হাজার ৭১৩ জন। আহত হন প্রায় ১৩ হাজার। ২ হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান ৩ হাজার ৯১ জন; যা মোট মৃত্যুর ৪০.০৭ শতাংশ। সড়কে মৃত্যুর এ মিছিল থামানোই যাচ্ছে না। বিশেষ করে মোটরবাইকে দুর্ঘটনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা নিঃসন্দেহে ভীতিকর। দেখা যায়, বাইক দুর্ঘটনাগুলো জাতীয় মহাসড়কের চেয়ে আঞ্চলিক মহাসড়গুলোয় ঘটছে অধিক পরিমাণে। গ্রামাঞ্চলে মোটরবাইকে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিশোর-তরুণদের নিয়ম না মেনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোকে দায়ি করেন।
বিশ্লেষকরা সড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ যেমন-বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, যাত্রী ও পথচারীর অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখল থাকার কথা বলছেন। সেইসঙ্গে রয়েছে ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাটবাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল। দ্রুত সড়কে দুর্ঘটনা কমানো আবশ্যক। মোটরবাইকের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মানুষ তার প্রয়োজনেই তা ব্যবহার করবে। কিন্তু তা যেন প্রয়োজনেই ব্যবহার হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার। তবে মোটরবাইকে সড়কে দুর্ঘটনা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মোটরবাইকে দুর্ঘটনা কমাতে এ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান নীতিমালাগুলো সবাইকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা দরকার। কারা মোটরবাইক কিনতে পারবে, লাইসেন্স ছাড়া যেন কেউ বাইক চালাতে না পারে, বয়স কত হবে, রাস্তায় কতো গাড়ি চলবে, দোকানে কতো বাইক বিক্রি করতে পারবে তার ওপরও তদারকি থাকা, এমনকি কতো সিসির ওপরে বিক্রি করা যাবে না ইত্যাদি বিষয়ে পলিসি গ্রহণ করতে হবে।
আমরা মনে করি, সবার আগে চালকদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দরকার। তার জন্য দরকার সচেতনতা। জীবনকে অকালমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে একটু সচেতনতাই যথেষ্ট। একটু সময় বাঁচানোর প্রতিযোগিতায়, জীবন নামের মূল্যবান সম্পদকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা উচিত নয়। কারণ প্রতিটি জীবনই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জরুরি।