বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থামছে না। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের পর মধ্যস্বত্বভোগীদের চোখ পড়েছে মাছ-মাংসের বাজারে। খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়িয়ে অস্থির করছে বাজার। এ চক্রের সঙ্গে জোট বেঁধেছে খুচরা বিক্রেতারাও। দুইয়ে মিলে নানা অজুহাত আর সংকট দাঁড় করিয়ে পকেট কাটছে ভোক্তার। তাদের কারসাজিতে খুচরা বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা দাম কমলেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি এখনো ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরু ও খাসির মাংস কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে যথাক্রমে ৭৮০ ও ১১০০ টাকা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, গরিবের পাতে মাছ-মাংস তোলা দায় হয়ে পড়েছে। সামর্থ্য না থাকায় খাবার তালিকা থেকে অনেক আগেই বাদ পড়েছে মাংস। বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে নি¤œ ও মধ্যবিত্তদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলত, তারাও অনেকটা নিরুপায়। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের সংশ্লিষ্টরা সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। যে কারণে চাষি এবং ভোক্তা উভয়ই ঠকছেন। এ অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলেই দেখা গেছে, সেখানে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। বোরো ফসল কেটে গোলায় তোলার সময় কৃষকের অর্থনৈতিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে পানির দরে ধান সংগ্রহ করছে মজুতদার ও ফড়িয়াদের একটি সিন্ডিকেট। কোনো প্রকার বাধা-নিষেধ না থাকায় স্থানীয় মুনাফাখোরদের যোগসাজশে চলছে কম দামে বোরো ধান কেনার মহোৎসব। খাদ্যে উদ্বৃত্ত কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চল বোরো ফসলের অফুরন্ত ভান্ডার হিসাবে পরিচিত হলেও সুদখোর মহাজনদের কারণে পদে পদে ঠকছেন কৃষক। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে একদিকে ফসল ফলিয়েও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক। অন্যদিকে ভোক্তাকে সেসব পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়ামূল্যে। ভোক্তা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হলেও প্রান্তিক উৎপাদক এর সুফল পাচ্ছেন না, এটি দুঃখজনক। মজুতদার-ফড়িয়া সিন্ডিকেট চক্রের এহেন অপকর্ম কোনো অবস্থাতেই চলতে দেওয়া যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যে অবসানে কী করণীয়, কর্তৃপক্ষের তা অজানা নয়। এমন অবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্যের অবসানে কেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সফলতার পরিচয় দিতে পারছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব অনিয়ম-অব্যবস্থার অবসানে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি বিকল্প উপায়ে খাদ্যপণ্যের সরবরাহও বাড়াতে হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.