ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কৃত হয়েছে। আর এই কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বারডেম হাসপাতালের ভিজিটিং অধ্যাপক ডা. মধু এস মালো। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার’-এ। ডায়াবেটিসের নতুন কারণসংবলিত এই প্রবন্ধের শিরোনাম ‘ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস ডেফিসিয়েন্সি ইনক্রিজেস দ্য রিস্ক অফ ডায়াবেটিস’। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রান্তের উপরের অংশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ একটি জারক রস কমে গেলে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই জারক রস বা এনজাইমের নাম ইন্টেস্টাইনাল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস, সংক্ষেপে আইএপি। ডা. মধু এস মালো জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০) ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি ৫৭৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের এই নতুন কারণ সম্পর্কে জানা গেছে। তিনি বলেন, আইএপি স্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যারা এমন স্বল্পতায় ভোগেন না, তাদের চেয়ে অনেক বেশি হয় এবং যাদের শরীরে আইএপির পরিমাণ কমে যায়, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেড়ে যায়। তিনি আরও জানান, স্টুল (মল) পরীক্ষা করে কারও শরীরে আইএপি কম আছে কিনা, তা ৩ মিনিটের মধ্যে জানা যাবে। এনজাইমটির স্বল্পতার কারণে যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিসমুক্ত থাকতে পারেন। স্টুল পরীক্ষার জন্য তার প্রস্তুতকৃত কিট ব্যবহারের ব্যবস্থা করার জন্য নীতিনির্ধারক ও সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এই গবেষক।
ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার নিঃসন্দেহে এক বড় মাপের সাফল্য। ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি ডা. একে আজাদ খান বলেছেন, এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সারা বিশ্বে ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, আর বাংলাদেশে এ রোগীর সংখ্যা ৮৪ লাখের বেশি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে তো বটেই, পৃথিবীর সব মানুষের জন্যই খবরটি নিশ্চয়ই সুখকর। কারণ, নতুন এই আবিষ্কারের পর ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। আমরা আগে জানতাম জেনেটিক কারণ, ইনসুলিন রেজিস্টেন্স, কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে ডায়াবেটিস রোগের জন্ম হয়। এখন জানা গেলো আইএপি’র ঘাটতিও ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এই নতুন জ্ঞানলাভের পর যাদের শরীরে আইএপি কম, নানা খাদ্যের মাধ্যমে তাদের ভেতর এই এনজাইমটির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। ডায়াবেটিসসংক্রান্ত নতুন আবিষ্কারের জন্য আমরা বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সাধুবাদ জানাতে চাই। তারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও বড় মাপের কাজ করতে পারেন। আগামীতে এদেশের বিজ্ঞানীরা জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আরও নতুন নতুন অবদান রাখতে সক্ষম হবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।