গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই সবচেয়ে জরুরি

নানামুখী চ্যালেঞ্জ, শঙ্কা ও ষড়যন্ত্রের চাপ সামলে ছয় মাস পার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সময়ে সংস্কার কমিশন গঠন, ভঙ্গুর অর্থনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টায় কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে গেলো ছয় মাসের বড় একটা সময় প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় পার করতে হয়েছে এ সরকারকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা দাবির মিছিলে শ্লথ হয়েছে সরকারের অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গতি। এছাড়া নানা ধরনের চক্রান্তের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। ফলে সরকারের ওপর রাজনৈতিক দল ও জনগণের পুরোপুরি সমর্থন থাকলেও তাদের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা, তার সার্বিক প্রতিফলন দৃশ্যমান হয়নি। এ কারণে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে পারছে না জনগণ।
সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গণহত্যার বিচার, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারে জড়িতদের বিচার ও টাকা ফেরত আনা এবং দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন। বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পণ্যমূল্যে এখনো নিয়ন্ত্রণ না আসায় মূল্যস্ফীতিতেও খুব বেশি সুফল মিলছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি নেই। আরেকটি বেদনার বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনে আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের কাক্সিক্ষত সহায়তা না পাওয়া। উন্নত চিকিৎসা, পুনর্বাসন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আর্থিক সহযোগিতার দাবিতে তারা রাস্তায়ও নেমেছে একাধিকবার। যদিও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের দাবি পূরণে কাজ চলছে; কিন্তু আমরা দেখছি, সেই গতি খুবই মন্থর, যা কাক্সিক্ষত নয়।
অবশ্য স্বীকার করতে হবে, যেসব বিষয়ে সরকার কাজ করছে, তা টেকসই করতে হলে সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্বপ্ন এবং জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিনের সেই জমে থাকা আবর্জনা রাতারাতি পরিষ্কার করে তাদের পক্ষে সব প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা দেখছি, এ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা রিপোর্ট দেয়া শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসছে, কাটছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খলাও, সচল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এমনকি বৈদেশিক সম্পর্কেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।
এটাও সত্য, অন্তর্বর্তী সরকারের বেশকিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সেসব কাটিয়ে উঠেই কাজ করতে হচ্ছে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সৃজনশীল উপায়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। জন-আকাক্সক্ষা পূরণের উত্তম উপায় হচ্ছে, দেশকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। তথা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সর্বাধিক মনোযোগ দেয়া। সেক্ষেত্রে আগামীতে জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আসবেন, চলমান সংস্কার কাজগুলো তারা এগিয়ে নিতে পারবেন। জনগণকেও মনে রাখতে হবে, সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন দেশাত্মবোধের। মনে রাখতে হবে, একটি সুন্দর আগামীর জন্য যারা অকাতরে আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব আমাদেরই।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More