সরকারি চাকরির আবেদনে সনদ সত্যায়নের প্রয়োজন নেই বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটির সুপারিশ সাত বছরেও কেন বাস্তবায়িত হয়নি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর মেলেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটি ২০১৫ সালের সুপারিশে বলেছিলো, সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়ন থাকবে না। এছাড়া ধীরে ধীরে ভর্তি, ঋণ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ বিভিন্ন কাজে সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়ার কথাও সে সময় ভাবা হয়েছিলো। সেই ভাবনা এখনো ভাবনার মধ্যে আছে। বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যখন সরকারের সব কাজকর্ম খাতাপত্রে সম্পাদিত হতো, তখন সত্যায়নের প্রয়োজন ছিলো। কোনো অফিসে চাকরির আবেদন করলে শিক্ষা বা অন্য সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হতো।
কিন্তু যখন ডিজিটাল বাংলাদেশে উত্তরণের কথা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে আমরা অহরহ শুনে আসছি, তখন এর যৌক্তিকতা থাকার কোনো কারণ নেই। সত্যায়নের পক্ষে যুক্তি দেয়া হয় যে নকল সনদ দেখিয়েও অনেকে আবেদন করে থাকেন। এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য তা বলা যাবে না। কিন্তু যখন অর্থের বিনিময়ে ভুয়া সিল মেরে সনদ ও কাগজপত্র সত্যায়ন করা হয় এবং তা দিয়ে কাজ হয়, তখন সত্যায়ন বিষয়টি নিছক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছু বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থ সরকারি-বেসরকারি সব স্তরের কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদন করার উদ্যোগ নেয়া। দেশের সব নাগরিকের সব ধরনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকবে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। কোনো নাগরিক ভুল তথ্য দিলে সেটি ডেটাবেজে ধরা পড়বে।
জন্মসনদ থেকে শুরু করে শিক্ষাসনদ সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নাগরিকের পরিচয়পত্রে প্রয়োজনীয় সব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো নাগরিককে কোনো পর্যায়ে সনদ বা এর সত্যায়িত কপির জন্য ভোগান্তির শিকার হতে হবে না।
কাগজের সনদ হারিয়ে যাওয়ার, নষ্ট হওয়ার বা চুরি হওয়ার ভয় থাকে, ডিজিটালে সেই ভয় নেই। নাগরিকের মূল সনদের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সত্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিলো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সত্যায়িত কপির যথার্থতাকে নিরূপণ করার আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেই।
নীলক্ষেতে সামান্য অর্থের বিনিময়ে যেহেতু যেকোনো সনদ সত্যায়ন করা যায়, তাই অনেকেই এখন আর যথাযথ সত্যায়নের পথ ধরেন না। সরকার চাইলেই প্রত্যেক নাগরিকের সব তথ্য ডেটাবেজে ধারণ করতে পারে এবং আবেদনপত্রে দেয়া তার তথ্য কর্তৃপক্ষ সহজে যাচাই বাছাই করে নিতে পারে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত বছর সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়ন প্রক্রিয়া তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরপরও অনেক দিন চলে গেছে। মন্ত্রীর কথা যদি এভাবে অবাস্তবায়িত থেকে যায়, তবে নাগরিকেরা কার কথার ওপর ভরসা রাখবেন?
আমরা আশা করবো, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। সরকারিভাবে আবেদনের সঙ্গে সনদের সত্যায়িত কপির বিষয়টি বাদ দিলে বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে সেই নীতি অনুসরণ করতে তাগিদ দেয়া যাবে। কেবল শিক্ষাসনদ নয়, জীবনের সব সনদের ক্ষেত্রে অভিন্ন রীতি চালু হওয়া প্রয়োজন। কেবল মুখে বললেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না, কাজেই তার প্রমাণ দিতে হবে।