আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ৫৪৬ রানের ইতিহাস গড়া সুবিশাল জয়কে প্রকৃত অর্থে ঐতিহাসিকই বলতে হবে। কেননা, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ রকম বিশাল রানের ব্যবধানে কোনো দলের জয় পাওয়ার রেকর্ড রীতিমতো দুর্লভ। বিশেষ করে সেই দলের যে দলটি চার বছর আগে ২০১৯ সালে নবীন টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আফগানিস্তানের কাছে ঘরের মাঠে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে হেরেছিলো ২২৪ রানের ব্যবধানে। লজ্জাস্কর সেই হারের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশের টাইগারদের। আফগানিস্তান তখন বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগে হেরেছে মাত্র ৬ টেস্ট। আর বাংলাদেশ ততোদিনে খেলে ফেলেছে ১৩৭ টেস্ট। তাই বলে বর্তমানের বিশাল ঐতিহাসিক বিজয়কে বলা যাবে না যে, এটি একটি চরম প্রতিশোধ। বর্তমানে বাংলাদেশ দলে সেই দলের অনেকে যেমন নেই, তেমনি আফগানিস্তান দলেও কোনো কোনো স্বনামখ্যাত খেলোয়াড় এবারে আসতে পারেনি বাংলাদেশ সফরে। তদুপরি প্রতিটি খেলাকে আলাদাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন-বাংলাদেশের চিরাচরিত স্পিন সহায়ক মিরপুরের পিচ এবারে পরিণত হয়েছে পেস বান্ধবে। টাইগার দলের পেসারদের উন্নতিও বলতে হবে চোখ ধাঁধানো, অসাধারণ। যার বিরুদ্ধে ২ ইনিংসে খেলতে গিয়ে একে একে ধসে পড়েছে আফগান ব্যাটাররা। এই টেস্টে ১৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছে পেসাররাই।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উন্নতি ও আত্মবিশ্বাস রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। প্রথমত, নাজমুল হোসেনের জোড়া সেঞ্চুরি। ২৬ মাস পর মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির সঙ্গে সাক্ষাৎ। ব্যাটারদের এই কৃতিত্বেও বাংলাদেশ দলের গড়ে ওঠে সুবিশাল রানের পাহাড়। যার মোকাবেলা করা টাইগারদের দুর্দান্ত পেসে আফগান ব্যাটারদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবার ওপরে উঠে আসে বিশাল একটি সংখ্যা-৫৪৬। টেস্ট ক্রিকেটে রানের হিসেবে সুদীর্ঘ ৮৯ বছরের মধ্যে জয়-পরাজয়ের সবচেয়ে বড় ব্যবধান এটি। ১৯৩৪ সালে ওভালে সে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়েছিলো ক্রিকেটের কিংবদন্তি বলে খ্যাত ডন ব্রাডম্যানের দল অস্ট্রেলিয়া। তবে সেই দলের কেউই আজ আর বেঁচে নেই। সে প্রেক্ষাপটেও টাইগারদের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয় বলতেই হবে- যা বিশ্ব ক্রিকেটের টেস্টের প্রেক্ষাপটে তৃতীয় বৃহত্তম রেকর্ড।
আফগান দলের ইংরেজ কোচ জোনাথন ট্রটও বিষয়টি স্বীকার করেছেন অকপটে। পরাজিত আফগানদের পক্ষে গণমাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, টাইগাররা নিজেদের দাপট সক্ষমতা শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতার সমুজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে ক্রিকেটে। আদর্শ টেস্ট ম্যাচ কাকে বলে তা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। যুগপৎ এই কৃতিত্ব অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটসম্যান বোলার ও ফিল্ডারদের। কোচ হাতুরুসিংহের কথাও বলতে হবে অবশ্যই। তিনি স্বল্প দিনের ব্যবধানে টাইগারদের মধ্যে গড়ে তুলেছেন আত্মবিশ^াসে বলীয়ান তারুণ্যে ভরপুর তেজস্বী সুষম সুষ্ঠু ও সমন্বিত একটি দল হিসেবে, যে দলটি বিজয় ছিনিয়ে আনতে জানে বড় রানের ব্যবধানে। সাবাস বাংলাদেশ ক্রিকেট দল- টুপিখোলা অভিনন্দন।