এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা জরুরি

সম্পাদকীয়

দেশে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বর্তমানে এতোটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সাড়ে ৮ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইতিমধ্যে দেশের ৫২ জেলায় আক্রান্ত রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত বেড়ে দাঁড়ালো ১০৬ জনে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৪ জন রোগী। এ নিয়ে দেশে হাপসাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ৩০৪ জনে।

ইতোমধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক চিকিৎসক মারা গেছেন। রোগীর চাপে রাজধানীতে কোনো হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই। হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গি ইউনিট চালু করার কথা বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ।

আমরা মনে করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ বছর যে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে পারে, তা কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় আসছিলো। বিশেষজ্ঞরা বারবার কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তা কতোটা পর্যাপ্ত ছিলো, অপর্যাপ্ত সক্ষমতায় কর্তৃপক্ষ সারা দেশে মশক নিধনে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাতে মানুষ কতোটা সুফল পাবে, এটাও এক প্রশ্ন। ডেঙ্গি থেকে বাঁচার জন্য এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা জরুরি। দেশের মানুষ সচেতন না হলে কেবল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গৃহীত পদক্ষেপে এডিস মশা নির্মূল হবে না। কাজেই মশক নিধনে দেশবাসীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

বস্তুত ডেঙ্গিসংক্রান্ত আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে মশক নিধন কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। মশক নিধনে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজে ফাঁকি দেয়ার বিষয়টিও আলোচিত। এসব বিষয়ে যথাযথ মনিটরিং চালু না হলে মশক নিধনে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। যেসব ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে কী সুফল পাওয়া যায়, তা যাচাই করা দরকার।

এডিসের হটস্পট নির্ধারণ করে এর উৎসস্থল নষ্ট করা গেলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমবে। যেহেতু একটি হটস্পট ধ্বংস করার পর নতুন নতুন হটস্পটের খবর পাওয়া যায়, সেহেতু সব স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করা না হলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে না। এ বিষয়ে কাক্সিক্ষত সুফল পেতে হলে নিতে হবে সমন্বিত বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রচুর তরল খাবার ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খেতে হয়। কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক বা এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। ডেঙ্গি পজিটিভ হয়েও প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত না হলে পরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। জটিলতা এড়াতে জ্বর হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব ডেঙ্গি রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More