বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের সহিংস ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বোঝাই যাচ্ছে, নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি বলছে, ‘সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে’ তারা ক্ষমতার পরিবর্তন চান। অপরদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, ‘বরাবরের মতো দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তবে আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করলে হাত ভেঙে দেয়া হবে।’ দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের এমন মুখোমুখি অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষকে ক্রমেই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এমন রাজনৈতিক অবস্থা চলতে থাকলে এবং তা নিয়ন্ত্রণে সব দল ও পক্ষ সমঝোতায় এগিয়ে না এলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি জনগণের জন্য উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ারই শামিল হবে। এটা সত্যি, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দেশে ও বিদেশে আগ্রহ রয়েছে। সব পক্ষই চায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক। কিন্তু সেজন্য দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীল ও সমঝোতামূলক মনোভাব। তা না হলে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ যেমন হতাহতের সংখ্যা বাড়াবে, তেমনি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ওপর জনগণের আস্থা আরও দূরে সরে যাবে। গত কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে এর প্রতিফলনও আমরা দেখতে পেয়েছি। খোদ নির্বাচন কমিশনই বলেছে, নির্বাচনের দিনগুলোয় আশানুরূপ ভোটার মেলে না। যার মানে হচ্ছে, ভোটারের মনে আস্থার জায়গা তৈরিতে শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও এগিয়ে আসার প্রয়োজন আছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বিদ্যমান আইনের ৯১ ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন চলাকালে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এক্ষেত্রে সংশোধনীর মাধ্যমে যে পরিবর্তন আনা হচ্ছে তা হলো, নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে পুরো আসন নয়, কেবল সেই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা থাকবে ইসির। এ সংশোধনী আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জনগণের মনে কতোটা আস্থা বৃদ্ধি করবে, তা ভেবে দেখার বিষয়। আমরা জানি, যারা দেশ ও দশের জন্য ভাবেন এবং কাজ করেন, তারাই রাজনীতিতে আসেন। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু রাজনীতি যদি হয় শুধুই ক্ষমতাকেন্দ্রিক, তাহলে তা সামগ্রিক কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বয়ে আনবে। বিদ্যমান সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দল সমঝোতার ব্যাপারে সচেষ্ট হবে-এটাই প্রত্যাশা।