ঈদ সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বেড়েছে। সমস্যাটা প্রায় সারা দেশের; সারা বছরের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশকে বললে পুলিশ মুখস্থ নিয়মে জানায়, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই ‘খোঁজ’ আর নেয়া হয় না; তাই ‘ব্যবস্থা নেয়ার’ প্রশ্নও আসে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সবার সামনেই মহাসড়কে চালকদের চাঁদা শিকারিদের খপ্পরে পড়তে হয়। চাঁদা না দিয়ে যান চালাতে গেলে জান যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হয়। প্রতিবছর ঈদের আগে এ চাঁদা শিকারিদের বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। দেশের বহু জায়গায় তারা মহাসড়কের পাশে বেশ আয়োজন করে চাঁদাবাজি করেন। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বেশ পুরোনো। ব্যবসায়ীদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। দলীয় নেতাকর্মীরা যে চাঁদা নেন, তা অনেকটাই প্রকাশ্য। চাঁদা না দিলে পণ্যের ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয়ার নজিরও কম নয়। গত কয়েক বছরে পণ্য পরিবহনে প্রকাশ্য বা গুপ্ত চাঁদাবাজি কমেনি, বরং বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনে রাখা প্রয়োজন, পরিবহনে যে চাঁদাবাজি হয়, সেটি ব্যবসায়ীরা পকেট থেকে দেন না। চূড়ান্ত বিচারে ভোক্তাকেই এর দায় বহন করতে হয়। তাই জনস্বার্থে বিষয়টি আমলে নেয়া প্রয়োজন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদে সড়ক-মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। আর মহসড়কে যানজটের ফলে যাত্রীদের সইতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিনে অনেক সময় ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে যায়। বরাবরের মতো এবারও প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে মহাসড়কে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি চলবে না এবং কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশ কোনো গাড়িকে সিগন্যাল দেবে না। তা ছাড়া কোনো সংগঠন বা সংস্থার নামে কেউ চাঁদাবাজি করে এবং কারও বিরুদ্ধে যদি চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদে সাধারণ মানুষের যাত্রা নিশ্চিতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি নিয়োজিত থাকবে জেলা পুলিশ। দু-এক দিনের মধ্যেই জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করবে।
অন্যদিকে এরই মধ্যে ঈদ সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ঈদে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে সব ধরনের চাঁদাবাজি প্রতিরোধে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশকে মিলিতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। দেশে সব সময়ই অধিকংশ চাঁদাবাজির ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর ছত্রছায়ায় ঘটছে, তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা ছাড়া শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এ অরাজকতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে পুলিশের নামও বেশ স্পষ্টভাবেই যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কাজেই দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে চাঁদাবাজি থেকে সুরক্ষা প্রদানে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির কারণে রাস্তায় চলাচলকারী অগণিত যাত্রী প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জনস্বার্থ রক্ষায় চাঁদাবাজির মতো অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকা- অবিলম্বে রোধ করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতা নামধারী ব্যক্তি কিংবা সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যে কেউ চাঁদাবাজির মতো বেআইনি কর্মকা-ে লিপ্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার কঠোর হবে।