আমদানির সারে অনিয়মের চাষাবাদ

সম্পাদকীয়

বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় সর্বব্যাপ্ত হয়ে পড়ার পর এমন চিত্র প্রায়শ দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত মজুত থাকার দাবি করলেও কৃষক যথাসময় ও যথামূল্যে তা পান না। কিন্তু আমদানিকৃত রাসায়নিক সার নিয়ে বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন-বিসিআইসি যেই সংকটে পড়েছে, তা অভূতপূর্ব। ২০২১-২২ অর্থবৎসরে সরকার হতে সরকার চুক্তির আওতায় সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হতে সার আমদানি এবং তা সরকারি গুদামে পৌঁছুনোর ঠিকাদারি পেয়েছিলো ‘পোটন ট্রেডার্স’। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭১ সহস্র টন সার বিসিআইসির গুদামে না পৌঁছে আত্মসাৎ করেছে। এই অনিয়মের জন্য অর্থদ- এমনকি কারাদ- হওয়ার কথা, কিন্তু বিসিআইসি একাদিকবার তাগাদা পত্র দিয়ে যাচ্ছে। ওইদিকে বিভিন্ন সময়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করছে না পোটন ট্রেডার্স।

সর্বশেষ বিসিআইসি তদন্ত কমিটি দেখেছে, পোটনের গুদামে মাত্র ১৩শ টন ব্যবহারের অনুপযোগী সার পড়ে আছে। বাকি ৭০ সহস্র টন সার তারা স্পষ্টতই বিক্রি করে দিয়েছে। নিয়মমতো সারের ক্রয়মূল্য, জাহাজ ভাড়া, সিঅ্যান্ডএফ ফি, সার্ভে ফি, এলসি ও ইন্স্যুরেন্স বাবদ ব্যয় হওয়া ৫৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার দ্বিগুণ জরিমানা দেয়ার কথা পোটন ট্রেডার্সের। উল্টো বিসিআইসির নামে ১৩টি সালিশি মামলা করেছে পোটন ট্রেডার্স। কর্মকর্তারা এখন সার উদ্ধার করবেন, না আপন কার্যে ব্যাপৃত থাকবেন, নাকি আদালতে দৌড়েবেন?

আমরা জানি, আমদানিকৃত সার গ্রাহকের নিকট পৌঁছুনোর তিনটা প্রক্রিয়া: বিদেশে ক্রয় করে সমুদ্রপথে দেশে পৌঁছুনো, বন্দর হতে সরকারি গুদামে পৌঁছুনোর জন্য স্থানীয় পরিবহন এবং বিসিআইসির গুদাম হতে ডিলারদেরকে সরবরাহ। দুইটা ধাপের ঠিকাদারি পেয়ে তৃতীয় ধাপও কি পোটন ট্রেডার্স ‘নিজ দায়িত্বে’ গ্রহণ করেছে? আমরা জানি, পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খান পোটন। তার ভ্রাতা ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনেরও নেতা। তাই বলে সরকারি সার আত্মসাৎ করার অধিকার জন্মায়? স্পষ্টতই এই ‘গায়ের জোর’ এক দিনে জন্মায়নি। এটি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের চাষাবাদের ফসল।

আমরা মনে করি, কৃষকের অধিকার ও জীবিকা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রাসায়নিক সার নিয়ে পোটনকা- নিরসন কঠিন হতে পারে না। কিন্তু সেজন্য চাই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা। আমরা বিশ্বাস করি, পোটন গঙের খুঁটি শক্তিশালীই হোক, ওই খুঁটি উৎপাটনে আইনের হাত ততোধিক শক্তিশালী।

সুশাসন ও সুনীতির প্রশ্নে তো বটেই; ভুলে যাওয়া চলবে না, ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সারের দাবিতেই অন্তত ১৮ জন কৃষক প্রাণ দিয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে তা ইস্যু করে তুলে সুফল পাওয়া এবং বর্তমানেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিবসটিকে ‘কৃষক হত্যা’ দিবসরূপে পালন করে থাকে। তাদের শাসনামলে সার সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে উদাসীনতা কাম্য হতে পারে না। আর সারের ন্যায় ‘স্পর্শকাতার’ পণ্যে অনিয়মের বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা হবে আত্মঘাতের নামান্তর।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More