আবার ভয়াবহ দুর্ঘটনা : সড়ক নিরাপদ হবে কবে

সম্পাদকীয়

সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেমে নেই। ঘাতক চাকার নিচে একের পর এক মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, যখন প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং ঝরে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ, তখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে বালুবাহী ট্রাক ও শ্রমিক বহনকারী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিলে আরও ৪ জন প্রাণ হারান। এছাড়া নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে এমন আশঙ্কাও আছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এই ঘটনাটির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। সামগ্রিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কতটা ভীতিপ্রদ ও আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে সেটিও আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্নও আসে যে, সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

প্রসঙ্গত, ভয়াবহ এই সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপ ভ্যানে করে প্রায় ৩০জন নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছুলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১জন মারা যান। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ এবং সিলেট ও ওসমানীনগরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় হতাহতদের উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে পাঠায়।

আমরা বলতে চাই, এবারের দুর্ঘটনায় সড়কে যেভাবে অন্তত ১৫ নির্মাণশ্রমিককে লাশ হতে হলো, তার ভয়াবহতা কীরূপ তা অনুধাবন করা জরুরি। এছাড়া এটাও এড়ানো যাবে না, যখন দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, লাশের মিছিল ভারী হচ্ছে- তখন সামিগ্রক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণও অপরিহার্য। বিবেচনায় নেয়া দরকার, এর আগে বারবার এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, বিপজ্জনক অভারটেকিং, বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ যানবাহন উঠে আসা, ছোট যানবাহন ক্রমেই বৃদ্ধি, বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা মহাসড়কে নেমে আসা, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে, রাস্তার মোড় ও বাস স্টপেজগুলোতে যানজট তৈরি করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সঙ্গত কারণেই, এই বিষয়গুলোকেও আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না।

এটাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, সড়কে চাঁদাবাজি ও রাস্তার পাশে হাট-বাজারও বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার পরিমাণ- এমনটিও আলোচনায় এসেছে বারবার। ফলে সার্বিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এটা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না যে, প্রতিদিন পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়কে মৃত্যুর খবর সামনে আসে। ফলে এইভাবে যদি প্রতিনিয়ত সড়কে মৃত্যুর মিছিল ভারী হতে থাকে তবে তার ভয়াবহতাকে এড়ানোর সুযোগ নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের দুর্ঘটনাটি আমলে নিন। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এটাও মনে রাখা দরকার- বিভিন্ন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ আলোচনায় এসেছে। এমনকি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। নানা প্রতিশ্রম্নতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ হয়নি। অন্যদিকে, ট্রেন ও নৌ দুর্ঘটনাও ঘটছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে, তা আমলে নিতে হবে এবং দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More