আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো উচিত

প্রতি বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বিশ্ববাজারে দেশীয় পণ্যের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের একটি সুবৃহৎ মাধ্যম। বিভিন্ন দেশে দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি ও প্রসারে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা হয়ে আসছে। তবে বৃহৎ পরিসরে এ মেলার আয়োজন করতে ২০২৩ সাল থেকে মেলা স্থানান্তর করা হয়েছে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে। পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হয়েছে এবারের ২৯তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ)। এবারের মেলা গতকাল উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মেলার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যমেলায় এবার দেশি-বিদেশি ৩৬১টি স্টল অংশগ্রহণ করছে। জুলাই-আগস্টের চেতনা ধারণ করে শুরু হওয়া বাণিজ্যমেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েকটি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি। এবার বাণিজ্যমেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস ও বিশেষ ছাড়ে উবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আন্তজার্তিক বাণিজ্যমেলার সূচনা রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হলেও এটি এখন মূলত দেশীয় পণ্যের বাজারে আটকে রয়েছে। অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় রফতানি আদেশ পাওয়ার বিপরীতে দেশীয় ক্রেতা ধরতে বেশি আগ্রহী। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। দেশীয় পণ্যের রফতানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো উচিত। অন্যদিকে এ মেলায় যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় সেগুলোর পণ্য রফতানির সুযোগ নিশ্চিত করতে দিতে হবে। একই সাথে মেলায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে; যাতে আমাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটে। বর্তমানে আমাদের বাণিজ্য তৈরি পোশাক খাত নির্ভরশীল। এটি ঘিরে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি আমরা। এ প্রবণতা আরো বেড়েছে পতিত স্বৈরাচারের দোসর কিছু গার্মেন্ট মালিকের কারণে। তাই পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে রফতানি বাণিজ্য বহুমুখী করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণে মনোযোগী ও যতœশীল হতে হবে।
বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামীতে বাণিজ্যমেলা হবে দেশজুড়ে। ঢাকায় বিদেশীদের নিয়ে হবে কেন্দ্রীয় মেলা। উপজেলা থেকে সেরা উদ্ভাবন আনতে পারলে হবে প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। তিনি বলেন, মানুষ মাত্র উদ্যোক্তা। মানুষের কাজই হলো নিজের মনমতো কাজ করা। বাণিজ্যমেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগ ও সৃজনশীলতা তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যা ও স্বল্প কর্মসংস্থানের দেশে উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করে তাদের উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাধ্যমে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ কাজে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে।
যেহেতু বাণিজ্যমেলা আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক আয়োজন। এ জন্য দেশের সব উৎপাদক, রফতানিকারক, আমদানিকারক, ক্রেতা-বিক্রেতাকে এই মেলায় নিয়ে এসে এর মান বাড়াতে হবে। প্রকৃত অর্থে এ মেলা আন্তর্জাতিক শব্দটির যথার্থ অর্থ ধারণ করে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠবে-এটিই সবার প্রত্যাশা।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More