আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজ পয়লা ফাল্গুনও। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। যুগল উপলক্ষ্য। প্রেমিকযুগলের জন্য এক মহার্ঘ্য দিন হয়ে এসেছে দিনটি। শুধু জুটিদের কথা বললে ঠিক বলা হয় না। ভালোবাসা দিবস আর প্রেমিক-প্রেমিকার একান্ত নিজস্ব দিন নেই, এটি হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। ভালোবাসা দিবস হয়ে উঠেছে সবার জন্য। ছেলে মাকে বিলক্ষণ ভালোবাসে। কিন্তু ঘটা করে সে-কথা যদি আজকে মুখে একবারও উচ্চারণ করে মায়ের সামনে, তবে জননীর আনন্দ কি বাঁধ মানবে? যিনি ভালোবাসেন, যিনি ভালোবাসা পেতে উন্মুখ, যিনি হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা খুঁজে চলেছেন, যিনি ভালোবাসার কথা বলতে কুণ্ঠিত হোন-সবার জন্য আজ এক পরম মাহেন্দ্রক্ষণ। ছাত্র তার শিক্ষককে বলুন, ভালোবাসি। সহকর্মী তার পাশের ডেস্কে কর্মরত মানুষটিকে বলুক, মেয়ে তার বাবাকে বলুক, তোমাকে ভালোবাসি, মা তার সন্তানদের বলুক, বাছারা তোরা আমার কলিজা, তোদের অনেক ভালোবাসি। বললেই হলো, উপহারসমেত বললে খুব ভালো, উপহার ছাড়াও বলতে বাধা নেই। দেখুন কী কা-টাই না ঘটে যাবে চারপাশে। ঝলমল করে উঠবে পরিবেশ। হেসে উঠবে প্রকৃতি।
আর হ্যাঁ, প্রকৃতি তো স্মিত হেসেই বসেই আছে এ দিনটির জন্য। কেননা, আজ যে পয়লা ফাল্গুন। বসন্ত এসে গেছে। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা এই বাংলায় স্বল্পকালীন হলেও ফিরে ফিরে আসে ছয়-ছয়টি ঋতু। আমরা বড় সৌভাগ্যবান। আমাদের সুনাম আছে ভালোবাসতে পারার ও জানার। অচেনাকে আমরা সহজেই আপন করে নিই। আমরা উৎসব অন্তপ্রাণ জাতিও। উপলক্ষ্য পেলেই আমরা আনন্দে মেতে উঠি। চব্বিশ ঘণ্টার মেয়াদ নিয়ে দুটো বড় উৎসবের উপলক্ষ্য এসেছে আজ বাংলাদেশে। পরপর দুদিন হলে এই উৎসব হতো ৪৮ ঘণ্টা, এটি ভেবে হাহুতাশ করার কিছু নেই। ভালোবাসার জন্যে দিবস কোনো বড় বিষয় নয়। প্রতিদিন ভালোবাসুন, কে বাধা দিচ্ছে! পয়লা ফাল্গুন হলো বসন্তের সূচনা। লাল হলুদ বর্ণে নিজেকে সাজাবো এই বসন্তে। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের যুগলবন্দী সৌরভ ছড়াবে। আপনিও আপনার হৃদয়ের জানালা খুলে দিন। সুবাস ছড়িয়ে দিন মানবকল্যাণে। তবেই না সার্থক হবে এই আহ্বান-‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ, ধন্য হলো ধন্য হলো মানবজীবন।’
ষড়ঋতুর এই দেশে বসন্তকে বলা হয় ‘ঋতুর রাণি’। এ সময় প্রকৃতি সাজে সম্পূর্ণ নতুনরূপে রঙিন হয়ে। শীতের শেষে পত্রপল্লবে জাগে নতুন শিহরণ। সবুজ কচি পাতায় ভরে যেতে থাকে গাছের ডালগুলো। সঙ্গে আমের মুকুলের প্রাণ মাতানো ঘ্রাণ! প্রকৃতিতে বইতে থাকে মৃদু-মন্দ হিম হিম এক মিষ্টি মধুর মন উদাস করা হাওয়া। সে হাওয়ায় মন উড়ে যায়। কেমন এক নিঃসঙ্গতা অনুভূত হয়! দুপুরটা যেন অনেক বেশি খা খা করে। ঠিক এমনি সময় ভালোবাসা দিবসের সূচনা। এতোদিন পয়লা ফাল্গুনের ঠিক পরদিনই ছিলো ভালোবাসা দিবস। দুদিনব্যাপী এই উৎসব পালনের জন্য থাকে বিশাল প্রস্তুতি, রীতিমতো ঈদের মতো কেনাকাটাও শুরু হয়ে যায়। একদিন ফাগুনের রঙে হলুদ-বাসন্তী সাজ, আরেকদিন ভালোবাসার আবিরমাখা লাল টুকটুকে সাজ।
২০২০ সালে বাংলা একাডেমির নতুন করে বাংলা তারিখ প্রবর্তনের ফলে পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। উৎসব পাগল কেউ ভাবছেন দুদিনের উৎসবই ভালো ছিলো। কেউ আবার ভাবছেন এটাই ভালো, একদিনে দুই উৎসব। এখন তাই লাল-হলুদ দু’রঙে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দিনটি। ভালোবাসা দিবস ভিনদেশী সংস্কৃতি থেকে আসলেও, ফাল্গুন একান্তই আমাদের বাঙালি উৎসব।