আগামীর বাংলাদেশের একটি স্বপ্নময় ছবি

বিশাল আয়োজনের মধ্যদিয়ে ৪ দিনব্যাপী দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ দেশের ইতিহাসে বিনিয়োগকারীদের এত বড় সম্মেলন এর আগে আর কখনো হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির কারণেই সম্ভব হয়েছে। এ সম্মেলনে আগামীর বাংলাদেশের একটি স্বপ্নময় ছবি ফুটে উঠেছে। সম্মেলনে সাড়ে ৪শর মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। সবাই বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে যার যার দেশে ফিরে গেছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকার ও দেশি বিনিয়োগকারীদের একটা নেটওয়ার্কও গড়ে উঠেছে। সম্মেলনে ২০৩৫ সালের বাংলাদেশের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, ভবিষ্যতে পলিসির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততার বিষয় দুটিও নিশ্চিত করা হয়েছে। সম্মেলনে বিডার নবনিযুক্ত নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সম্মেলন শেষে এটা বোঝা গেছে যে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদে পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষা করা হবে, এ বিষয়টিতেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন অবশ্য। এ চ্যালেঞ্জের প্রধান দুটি হলো নীতির ধারাবাহিকতা ও সম্পদের সহজলভ্যতা। এছাড়া দুর্নীতিকেও চ্যালেঞ্জ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, বিনিয়োগকারীদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, এর মর্মবস্তু ধারণ করা গেলে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের বেগ পেতে হবে না। বেশি বিনিয়োগ মানে বেশি কর্মসংস্থান। দেশে বেকারত্বের পরিমাণ অনেক। আমরা যে সময়টা পার করছি, তা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যুগ। বেকারত্বের অবসান ঘটানো মানে দেশের অগ্রযাত্রার গিয়ার উপরে ওঠা। প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশ যে অপার সম্ভাবনা ধারণ করে, গত ৫৩ বছরে সেই সম্ভাবনার খুব কমই কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাব ও দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া এ ব্যর্থতার কারণ। বর্তমান সরকারের এ দুই দুর্বলতা নেই। ফলে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা আশা করতেই পারি। এখন যা জরুরি, তা হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়েন, ইজি ডুয়িং বিজনেসের সূচকগুলো যেন ঊর্ধ্বমুখী থাকে, এসবে নজর দিতে হবে আমাদের। সবচেয়ে প্রয়োজন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বিনিয়োগকারীরা একটি অস্থির ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন, তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দেশে যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, সে ব্যাপারে তারা যেন আন্তরিক থাকেন। সাংঘর্ষিক রাজনীতি সমাজে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় বড় অন্তরায়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নির্বিঘেœ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ সম্মেলনের কোনো তাৎপর্যই থাকবে না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More