একদিকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বেড়েছে; অন্যদিকে সারাদেশে এক লাখেরও বেশি লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান চলছে। এসব দোকানের মালিকদের বেশির ভাগই ওষুধ কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত কোনো জ্ঞান-প্রশিক্ষণ নেই। এ পরিস্থিতিতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট সমিতি বিষয়টির প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। তবুও কোনো লাভ হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে চরম ঝুঁকিতে থাকা মানুষ মৃত্যুর দিকে দ্রুত ধাবিত হবেন বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অবৈধ ওষুধের দোকানগুলোতেই নকল, ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হয়। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর ওষুধ নীতি অনুসারে ২৮৫টি এলোপ্যাথিক ওষুধের তালিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩৯টি ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি করা যাবে। কিন্তু সাধারণ ওষুধের দোকানগুলো সে নির্দেশনা অনুসরণ করে না। বর্তমানে এক লাখ ৩০ হাজার লাইসেন্সধারী ওষুধের দোকান রয়েছে। আর ড্রাগিস্ট সমিতির হিসাব মতে অবৈধ ওষুধের দোকানের সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি। তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে এ সংখ্যা হবে সাড়ে ১৮ হাজারের মতো। অবৈধ ওষুধের দোকানগুলো বিভিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। অনেক বেকার যুবক ওষুধের দোকান খুলে ব্যবসা করছেন। কেউ কেউ যৌতুকের টাকা নিয়ে এ ব্যবসায় নামছেন। কিন্তু এর জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া আছে। তা কেউ মানছেন না। ফলে রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, যিনি ওষুধের দোকান দেবেন তাকে ফার্মাসিস্ট হতে হবে। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের দুই মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের অধীনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। এই নিয়ম অনেকেই মানছেন না। তারা অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, যদি লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ওষুধের দোকানের তালিকা বা তথ্য থাকে তাহলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া উচিত। এসব দোকান অবৈধভাবে চলতে দেয়া যাবে না। ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসন সাধারণত ভেজাল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে। আসলে, আমাদের এখানে কোনো সিস্টেমই নেই। যে যেভাবে পারে সে সেভাবে নিজের মতো করে চলছে। সবকিছু একটা সিস্টেমে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এটা সত্য বাংলাদেশে যতো ফার্মেসি রয়েছে, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো পরিমাণে নেই। এক সময় কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ওষুধ আনতে হতো, এখন হাত বাড়ালেই ফার্মেসি। জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতার মধ্যে যাতে থাকে সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। নজর দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি এবং লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান বন্ধের দিকেও। এজন্য সব ধরনের কার্যক্রম ও পরিকল্পনায় নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ