বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক নওরীন রহমান। বুধবার সকাল ১১টার দিকে শহরের বড় বাজার এলাকার একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন তিনি। এ সময় তিনি কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জসহ দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান তিনি।
কুষ্টিয়া থানায় অভিযোগ দেওয়ার দুই দিন পার হয়ে গেলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। এছাড়া তাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে এ সময় অভিযোগ করেন নওরীন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার জীবন আজ বিপন্নের পথে। শুধুমাত্র ছাত্রলীগকে ভালোবেসে এবং ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমি নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ শেখ চ্যালেঞ্জের হাত ধরে ছাত্রলীগে যোগ দেই। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় তার বাসায় আমাকে ডাকা হতো। একপর্যায়ে আমাকে বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব দিলে তা এড়িয়ে যাই। এর কিছুদিন পর পারিবারিক একটি ছবি তিনি হাতে পান। বাসায় ডেকে ওই ছবি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে কুপ্রস্তাব দেন। রাজি না হলে ওই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখান।
নওরীন বলেন, এরপর তিনি আমার আরও কিছু ছবি এডিট করে সেই ছবি দিয়ে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বাজেভাবে প্রচার শুরু করেন। চ্যালেঞ্জের সহযোগীরা আজেবাজে কথাবার্তাসহ আমাকে নানাভাবে হুমকি দেন। মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আমি কোনো উপায় না পেয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেই। কিন্তু অভিযোগ জমা দেওয়ার তিন দিন পার হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো চ্যালেঞ্জসহ তার সহযোগীরা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি সামাজিক গাযোগমাধ্যমেও আমার নামে আজেবাজে কথা লিখে পোস্ট করা হচ্ছে। পুলিশকে বিষয়টি বারবার জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জেলা নেতাদের জানিয়েছি, তারা এর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি আমি। কোনো ধরনের প্রতিকার না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আমি যদি আত্মহত্যা করি, তার জন্য পুলিশ, প্রশাসন, জেলার নেতারা সবাই দায়ী থাকবেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নওরীন বলেন, আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ। আমি আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই। স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে চাই আমি। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইজিপিসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, নওরীন এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ জমা দেন। ২০ সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় এজাহার জমা দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার রহমান বলেন, তরুণীর দেওয়া একটি মামলা এজাহার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেটি থানায় রেকর্ড করে সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্ত করে আসামিদের গ্রেফতার করবে। এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলেও জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, ভুল বোঝাবুঝির ফলে এটা হতে পারে। তারা বিষয়টি দেখছেন। কেউ যদি দোষ করে, সংগঠন থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার রিফাইতপুর এলাকার খলিলের ছেলে মো. হৃদয় (২৪), চুয়াডাঙ্গা শহরের আক্তারুজ্জামানের ছেলে মুহাইমিনুল মিরাজ (২৩), কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে রেফাউল ইসলাম (২২), দৌলতপুর থানার হালিম শিকদারের ছেলে শাকিল আহমেদ তুষার (২৮), ফারদিন সৃষ্টি (২২) ও কুমারখালী উপজেলার বড়ইচারা এলাকার সালামের ছেলে রাহাতুল ইসলাম (২১)। এর মধ্যে শাকিল আহমেদ তুষার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রেফাউল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক, ফারদিন সৃষ্টি সহ-সম্পাদক, রাহাতুল ইসলাম স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক সম্পাদক, মো. হৃদয় সদস্য এবং মুহাইমিনুল মিরাজ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। তবে বাদীর অভিযোগ মামলায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের নাম বাদ দিতে বাধ্য করেছেন পুলিশ।