ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি
জমে উঠেছে মেহেরপুর পৌর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা
স্টাফ রিপোর্টার: মেহেরপুরের পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে সম্প্রতি সেখানে গিয়ে ‘গ্যারান্টি’ দিয়ে এসেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। এমন ঘোষণায় ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা যোগ করেছে। প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন, ঘুরছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কে জিতবেন, কে হারবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শহরের শপিং মল, দোকানপাট ও সড়কে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৪ হাজার ৭৮৪ জন। ১৫ জুন হবে ভোট গ্রহণ। মেয়র পদে প্রার্থী দুজন। এর মধ্যে বর্তমান মেয়র মাহফুজুর রহমান এবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। অপর প্রতদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রসুল ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মধ্যে চলমান বিরোধ নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে। সদর আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে তারা মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। গোলাম রসুলের পক্ষের অন্যতম নেতা নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। পৌর নির্বাচনে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে না থাকলে সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাচ্ছিম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সবাই প্রচারণায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। প্রচারণায় দেখা গেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন ওরফে বুলবুলকে। দলের সবাইকে পাশে পাচ্ছেন বলে জানিয়ে মাহফুজুর বলছেন, গত পাঁচ বছরে পৌরসভাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভাঙাচোরা সড়কগুলো পাকা করা হয়েছে। অতিদরিদ্র পৌর বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি অনুদানের ভাতা কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এসব কারণে এবারও নৌকার পক্ষে বিপুল ভোট পড়ার আশা করছেন তিনি।
সম্ভাবনার দৌড়ে কম এগিয়ে নন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতাচ্ছিম। কোনো দল না করলেও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। ১৯৯৩ সালের ২৮ মার্চ প্রথমবারের মতো মেয়র হন। দুই যুগের বেশি সময় মেয়র থাকার পর গতবারের নির্বাচনে মাহফুজুরের কাছে হেরে যান তিনি। মোতাচ্ছিম এবার নারকেলগাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মাহফুজুরকে পৌরসভার ম-লপাড়া, বেড়পাড়া, মল্লিকপাড়াসহ পৌর শহরের বাজার এলাকায় ভোট চাইতে দেখা যায়। এ সময় সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন তিনি। পৌরসভার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে আবারও নির্বাচিত করতে ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন।
মোতাচ্ছিম ভোটারদের তার সময়ের উন্নয়ন তুলে ধরেন। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের ভোট প্রয়োগ করার অনুরোধ করে যাচ্ছেন তিনি। তার ভাষ্য, সব ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে জনগণ গণতান্ত্রিক পৌরসভা বিনির্মাণে ভোট প্রয়োগের বিকল্প নেই। ভোট প্রয়োগে ভোটারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সুষ্ঠু ভোট হলে ফলাফল পক্ষেই আসবে বলে আশাবাদী মোতাচ্ছিম।
তবে ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ভোটার। পৌর শহরের বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজ্জাক হোসেন, লালু শেখ, আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। ভোটের পরিবেশ ভালো থাকলে মানুষ তাঁদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এখন পর্যন্ত গত নির্বাচনের চেয়ে এবারে নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। প্রার্থীরা নির্ভয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে পারছেন।