জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার ঈদবাজার: ক্রেতা টানছে কাঁচা বাদাম ও পুষ্পা
বেড়েছে বিক্রেতাদের ব্যস্ততা; মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় জমে উঠেছে ঈদের বাজার। পবিত্র ঈদ উল ফিতর যতোই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। এখন দোকানিদের এক মুহূর্ত দম ফেলার ফুরসত নেই। গত দু’বছর করোনা মহামারির কারণে বেচাকেনা কিছুটা কম হলেও এবার ১০ রোজার পর থেকেই বাজারে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। এবারের ঈদবাজারে বিপণী-বিতানগুলোতে সবার নজর কাড়ছে কাঁচা বাদাম নামে ছেলেদের পোশাক। প্রতিটি দোকানে লক্ষ্য করা যায় কাঁচাবাদাম পোশাক কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতা আকর্ষণের শীর্ষে এখন কাঁচাবাদাম পোশাক। কেউ কেউ এই পোশাক নামে আকর্ষণীয় থাকায় কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার দাম বেশি থাকার কারণে না কিনে পোশাক দেখার স্বাদ মিটিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অন্যান্য জেলাগুলোতে কাঁচা বাদাম মেয়েদের পোষাক দেখা মিললেও চুয়াডাঙ্গাতে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেশী-বিদেশী পণ্যের সমাহার।
এদিকে ঈদকে ঘিরে কেনাকাটা ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কেটের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন মার্কেটে মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ।
গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা শহরের নিউ মার্কেট, প্রিন্সপ্লাজা, আব্দুল্লাহ সিটি ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে ঈদের বাজার। পরপর দুই বছর করোনার ভয়াল থাবার পর এ বছর পরিস্থিতি ভালো থাকায় বেশ আগেভাগেই সকলের মাঝে বিরাজ করছে ঈদ আমেজ। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কেনা কাটার ভিড়। বাজারে বর্তমানে নারী ও শিশুদের কেনাকাটাই বেশী চোখে পড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচা বাদাম’ গান গেয়ে রাতারাতি তারকা বনে গেছেন ভারতের বীরভূমের বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর। এই গান গেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ভাইরাল হন। ঈদ সামনে রেখে ছেলেদের জন্য চুয়াডাঙ্গার মার্কেটগুলোতে এসেছে কাঁচা বাদাম গেঞ্জি ও প্যান্ট। দোকানের সামনে দিয়ে গেলে ঝুলিয়ে রাখা কাঁচা বাদাম পোষাক দেখে দোকানে ঢুঁ মারছেন সবাই। কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে দেখছেন। দরদামে পোষালে কিনছেন।’ প্রতি কাঁচা বাদাম গেঞ্জির মূল্য ১৫০-১৬০ টাকা, প্যান্ট ৭৫০-৮০০ টাকা, শুধু কাঁচা বাদামই নয়, বিখ্যাত তেলেগু সিনেমা ‘পুষ্পা’র নামের সঙ্গে মিল রেখে এসেছে ছেলেদের টি-শার্ট ও প্যান্ট। ক্রেতারা এই নতুন পোশাক খুঁজছেন। কাঁচা বাদাম নতুন পোশাক হওয়ায় এটির বিক্রিও বেশ ভালো। প্রতি পুষ্পা টি-শার্ট ৪০০-৫০০ টাকা ও প্যান্ট ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এবারের ঈদ বাজারে মধ্য সব বয়সী নারীদের প্রথম পছন্দ রং-বেরংয়ের শাড়ি ও থ্রি-পিস। দোকানগুলোতে বরাবরের মতো ঢাকাইয়া জামদানী, কাতান, টাঙ্গাইলের সিল্ক শাড়ি এবং তাঁতের শাড়ি নারীদের চাহিদার শীর্ষে। তাঁতের শাড়ির মূল্য কিছুটা কম হলেও অন্যগুলো ডিজাইনের কারণে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়। ভালো মানের থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও কম মূল্যের মধ্যে ১৫০০ থেকে ৩ হাজারের মধ্যেও বিক্রি হতে দেখে গেছে।
শিশুদের জন্য অভিজাত দোকানগুলোতে রয়েছে দেশী-বিদেশী রং ও ডিজাইনের পোশাক। ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে শিশুদের আকর্ষণীয় পোষাক পাওয়া যাচ্ছে এবারের ঈদ বাজারে। অভিভাবকরা বলেন, আগের চেয়ে শিশুদের পোশাকের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় কাপড়ের মান বাড়েনি।
প্রিন্স প্লাজা মার্কেটের ব্যবসায়ী নিউ স্ট্যাইল টু এর মালিক নাজমুল হক বলেন। ঈদের সময় ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই আমরা আগে ভাগেই ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নতুন নতুন কালেকশন সংগ্রহ করি। এ বছর ঈদকে ঘিরে বাজারে এসেছে কাঁচা বাদাম, পুষ্পা নামে নানা রকমের পোশাক। তরুণরা কিনছে এই পোষাক। গতকাল সকালে কাঁচা বাদাম ও পুষ্পা পোষাক নিয়ে এসেছিলাম। রাতেই সব শেষ। নতুন করে ঢাকা থেকে নিয়ে আনতে হবে।
ছেলের জন্য কাঁচাবাদাম পোশাক কিনতে আশা আক্তার হোসেন জানান, এবার ছেলের পোশাকের দাম অনেক বেশি। আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। দাম এত বেশি হলে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ কেমন করে কিনবো। ছেলে বাইনা ধরেছে কাঁচা বাদাম প্যান্ট ও গেঞ্জি কিনবে। এক প্রকার বাধ্য হয়েই কিনে দিতে হলো।
ইয়াং কালেকশনের মালিক লিপ্টন বলেন, এখনও বড়দের পোশাক কেনা হয়নি। পরে কিনবো। তবে এবার অন্য সময়ের চেয়ে দাম বেশী। তারপর বাজার বেশ জমেছে। কারণ পর পর দুই বছর করোনা ছিল। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ জনপ্রিয়তার কারণেই কাঁচা বাদাম ও পুষ্পা পোশাক জায়গা করে নিচ্ছে ক্রেতাদের মনে।
আল আমিন নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সামাজিক ফেসবুক গ্রুপে প্রথম কাঁচা বাদাম ও পুষ্পা পোষাক বাজারে আসার খবর দেখি। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু কাঁচা বাদাম গেঞ্জি ও পুষ্পা প্যান্ট কিনেছেন। এটা দেখে আমিও এসেছি। একসঙ্গে প্রতি দুই জোড়া করে ‘কাঁচা বাদাম’ গেঞ্জি-প্যান্ট ও ‘পুষ্পা’ টি-শার্ট, প্যান্ট কিনেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ঈদকে ঘিরে কেনাকাটা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের টিম সবসময় টহল দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে কাজ করছে প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।