ঘরে স্ত্রী রেখে কিশোরী মাসুমাকে বিয়ের জন্য বেপরওয়া হয়ে উঠেছিলো কালাম
সুসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ :
আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা : অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে মাদরসা ছাত্র ছাত্রীদের মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার: আরামপাড়ার কালাম বিবাহিত হলেও মাদরাসা ছাত্রী মাসুমা আক্তারকে বিয়ের জন্য ফুসলিয়ে আসছিলো। এতে আপত্তি করার কারণে মাসুমার হতদরিদ্র পিতাকে নানাভাবে ভয়ভিতি দেখিয়ে আসছিলো কালাম। এ কারণেই মাসুমা আক্তার আত্মহত্যার আগে খাতায় লিখে গেছে, “কালামের কানে আমার মরার খবরটা দিও। তা হরে আব্বারে আর কিছু করবে না।” এদিকে উত্ত্যাক্তকারী কালামকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করার দাবি জানিয়ে সহপাঠিরা গতকাল মানববন্ধন করেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়ার আমিনুল ইসলামের ছোট মেয়ে মাসুমা আক্তার (১৭)। গতপরশু শনিবার নিজ বাড়িতে ঘরের আড়ায় উড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। ওইদিন রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আরামপাড়ার মোবা শেখের ছেলে কালাম হোসেনকে আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মাসুমা আক্তারের পিতা বাদি হয়ে দায়েরকৃত এ মামলার আসামি কালামকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলছিলো। এদিকে গতকাল চুয়ডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে মাসুমা আক্তারের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। বাদ মাগরিব নামাজে জানাজা শেষে জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ গতপরশু রাতে মাসুমার শোবার ঘর থেকে একটি সুসাইড নোট উদ্ধার করেছে। নোটে আত্মহত্যার বিষয়ে বিস্তারিত লিখে গেছে। পুলিশ বলেছে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় সুসাইড নোটটি স্বাক্ষ্য হিসেবে কাজে লাগবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাছাত্রী মাসুমা আক্তার (১৭) পড়াশোনার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অসুস্থ বাবার চা দোকানও দেখাশোনা করে আসছিলেন। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার সকালে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন তার বাবার চায়ের দোকান পরিষ্কার করতে যান মাসুমা। সে সময় দোকানে জেলা শহরের আরামপাড়ার মোবারকের ছেলে আবুল কালামের সঙ্গে আরেকজনের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। দোকানের মধ্যে মারামারি করতে দেখে মাসুমা আক্তার তাদের দোকান থেকে সরে যেতে বলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমাকে প্রকাশ্যে উপর্যুপরি চড়-ঘুষি মারে কালাম। এরপর হাতুড়ি নিয়ে পেটাতে গেলে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন মাসুমা। পরে মাসুমা আক্তারের বাবা-মাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অভিযুক্ত কালাম। এছাড়াও কালাম দীর্ঘদিন ধরে পথেঘাটে মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিস বৈঠকে বসার আশ্বাস দিলেও শেষমেশ তা হয় না। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও বখাটে কালামের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন মাসুমা। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার বিচার না পেয়ে রোববার বেলা ৫টার দিকে নিজঘরে গলায় ফাঁস দেন মাসুমা। পরে সন্ধ্যায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা আলিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও সহপাঠীরা মানববন্ধন করেছেন অভিযুক্ত কালামের শাস্তির দাবিতে।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, ‘চার বোনের মধ্যে মাসুমা আক্তার ছিল সবার ছোট। আবুল কালাম প্রায়ই মাসুমাকে উত্ত্যক্ত করত। এর আগে এসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল সে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, ‘রোববার রাতেই মাসুমার পিতা বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। নিহত মাদ্রাসাছাত্রীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাসুমার ঘর থেকে তার লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এটি মামলার সহায়ক হিসেবে কাজে লাগবে। অভিযুক্ত কালামকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।’
এদিকে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় কালামকে মাছপট্টির লেবার বলে উল্লেখ করা হয়। সদর উপজেলা মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বলেছেন, কালাম মাছপট্টির সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। অপরদিকে স্থানীয়রা বলেছে, বখাটে কালাম ঘরে স্ত্রী রেখে মাসুমাকে বিয়ের জন্য উত্ত্যাক্ত করতো। মাছুমার পিতার চা দোকান স্টেশনের অদূরবর্তি স্থানে। মাছপট্টিসহ এলাকায় ঘুরতো কালাম। মাসুমার আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কালাম আত্মগোপন করে।