চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৬ : ভ্যাকসিন নিয়েছেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপিসহ প্রায় ৩৭ হাজার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে টিকা গ্রহণ করেন। এ নিয়ে জেলায় মোট টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮শ ৮২জন। অপরদিকে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিলো ৬। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের ৩ জন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ৩ জন।
দেশের অন্যান্য জেলার মতো চুয়াডাঙ্গাতেও কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। গতকাল পর্যন্ত জেলার ৪৫ হাজার ১শ ১ জন টিকা নেয়ার আগ্রহ দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। যার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট ৩৬ হাজার ৮শ ৮২ জনের শরীরে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। গত দুদিন চুয়াডাঙ্গায় টিকা কিছুটা সংকট দেখা দিলেও পাশর্^বর্তী জেলা ঝিনাইদহ থেকে ২শ ডোজ টিকা নিয়ে চাহিদা পূরণ করা হয়। আজ বুধবার ১০ হাজার ডোজ টিকা চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে পৌঁছুনোর কথা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ২ হাজার ৪৮ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২শ ২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১ হাজার ২শ ৭৯জন, জীবননগর উপজেলার ৮৮ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ৪শ ৭৯জন। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন গতকাল যখন টিকা নেন; তখন তার পাশে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সাজিদ হাসান, স্টোরকিপার হাদিউজ্জামান হাদিসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। টিকা গ্রহণের পর নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম নিয়ে সুস্থভাবেই বাড়ি ফেরেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপি।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় গতকাল ১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনেরও কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়নি। নতুন আরও ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল পর্যন্ত জেলার মোট ৮ হাজার ২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট শনাক্ত ১ হাজার ৬শ ৭১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬শ ১৫ জন। মারা গেছেন ৫০ জন। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন ৩জন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরের একজন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২ জন। হাসপাতালে থাকা ৩ জনের মধ্যে ১ জন নারী। সূত্র বলেছে, ৩ জন বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পিরোজখালীর, ডিহি কৃষ্ণপুরের একজন, আলমডাঙ্গা এরশাদপুরের একজন। হাসপাতালে যে তিনজন রয়েছেন তাদের মধ্যে জেলা শহরের কানাপুকুরপাড়ার একজন পুরুষ, আলমডাঙ্গার খাসবাগুন্দা গ্রামের একজন নারী ও আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার একজন পুরুষ।
প্রসঙ্গত: আজ বুধবার করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার বিকেল ৫টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি টিকা নেবেন। এর আগে গত ৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ২৪ ফেব্রুয়ারি তার ছোট বোন শেখ রেহানা করোনার টিকা নেন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪০ লাখ ১৩ হাজার মানুষ টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছেন। সরকার ১৩ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ কোটি ৭১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। তবে বেশ কয়েক ধাপ বাড়ানোর পর আগামী ৩০ মার্চ খুলে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ৯১২ জন শনাক্তসহ দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৭ জন। মঙ্গলবার দুপুরে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।