এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের মোল্লাবাড়ী বাসস্ট্যাান্ডের পাশ্ববর্তী কোমরপাড়া নির্জন মাঠের এক আখক্ষেতের মধ্য থেকে তানজিরা খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূর বিবস্ত্র এবং ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করেছে জীবননগর থানা পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশ ওই মাঠ থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় ওই গৃহবধূর মাথা এবং গলাসহ শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তানজিরা খাতুন জীবননগর উপজেলার সিংনগর গ্রামের মেহেরপাড়ার আব্দুস সালামের স্ত্রী। কিন্তু তারা গত ৩ মাস ধরে আকন্দবাড়িয়া আবাসনের ৫ নম্বর ব্যারাকের ৫ নম্বর কক্ষে বসবাস করতেন। ওই আবাসনের বাসা থেকে সোমবার বেলা ৯ টায় স্বামী-স্ত্রী মিলে দু’জন রান্নার জন্য খড়ি কাটতে বের হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন।
এদিকে খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. আবু রাসেল, জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহীদ, উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় উথলী গ্রামের কয়েকজন কৃষক মাঠে ঘাস কাটতে যাচ্ছিলেন। তারা ওই আখক্ষেতের মধ্যে প্রবেশ করার পর ওই নারীর বিবস্ত্র এবং ক্ষত-বিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মইনুল হাসানকে জানান। এরপর ইউপি সদস্যের কাছ থেকে খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
শিংনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইমরুল হাসান রাজু জানান, সিংনগর গ্রামের আব্দুস সালাম ১০ বছর আগে ছটাংগা গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে তানজিরা খাতুনের সাথে বিয়ে করেন। এরপর তাদের কোলজুলে দু’টি মেয়ে সন্তান আসে। ৩ মাস আগে তারা নিজের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে আকন্দবাড়িয়া আবাসনে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
আকন্দবাড়িয়া আবাসনে বসবাসকারী আমেনা বেগম জানান, আব্দুস সালাম তেমন কোনো কাজ-কর্ম করতেন না। মাঝে মাঝে স্ত্রীর সাথে ভিক্ষা করতে যেতেন। আব্দুস সালাম বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছিলেন। মাঝে মাঝেই টাকার জন্য স্ত্রী তানজিরা খাতুনকে মারধর করতেন। তিনি আরও জানান, সোমবার সকাল ৯ টায় আব্দুস সালাম বাড়িতে রান্নার জন্য বড় একটা দা হাতে করে স্ত্রীর সাথে মাঠে খড়ি সংগ্রহ করতে যান। এরপর থেকে তারা আর বাড়িতে ফেরেননি।
আবাসনে বসবাসকারী আরেক বাসিন্দা মিনাজ হক জানান, সালাম ও তার স্ত্রী তানজিরা খাতুন সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে না ফেরায় তাদের দু’ মেয়ে ৫ বছর বয়সী সাবিনা খাতুন এবং ৩ বছর বয়সী আলিয়া খাতুন বাড়িতে কান্নাকাটি করছিলো। এক পর্যায়ে তাদের দু মেয়েকে শিংনগর গ্রামে দাদির কাছে রেখে আসা হয়।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, কিছুদিন আগে তানজিরা খাতুন তার স্বামীর বিরুদ্ধে উথলী ইউনিয়ন পরিষদে একটি বিচার দেন। পরে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে ডেকে মিল করে দেয়া হয়। তিনি জানান, আব্দুস সালাম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।
জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, বুধবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে উথলী গ্রামের একটি মাঠ থেকে তানজিরা খাতুন নামে এক গৃহবধূর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের সময় তানজিরা খাতুনের মাথায় এবং ঘাড়সহ শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপের দাগ রয়েছে। তিনি আরও জানান, হত্যাকান্ডটি সোমবারের কোনো এক সময় ঘটানো হয়েছে। এ কারণে লাশের থেকে তীব্র গন্ধ বের হচ্ছে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন স্বামী আব্দুস সালাম টাকার জন্য নিজেই তার স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডটি ঘটিয়ে স্বামী আব্দুস সালাম গা ঢাকা দিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. আবু রাসেল বলেন, হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং ঘাতককে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ