মহাসিন আলী: মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের সীমান্ত গ্রাম নবীননগর (খালপাড়া) সংলগ্ন ভারতীয় অংশে অবস্থিত ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত মসজিদটিতে গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ এখনও নিয়মিত আজান দেন, নামাজ পড়েন ও সন্ধ্যাবাতি জ্বালান। বর্তমানে বাংলাদেশের নবীননগর খালপাড়া অংশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে গ্রামের সব বয়সের মানুষ নামাজ পড়লেও শতবর্ষী ওই মসজিদটিতে আজও নামাজ পড়া বন্ধ করেননি গ্রামের কয়েকজন বৃদ্ধ।
বুড়িপোতা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ জামাল বলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী নবীননগর (খালপাড়া) গ্রাম। ব্রিটিশ আমলের কোনো এক সময় জমিদার নবীন বাবু ওইস্থানে তার অনুগত প্রজাদের বসিয়ে জমিদারি দেখাশুনা করতেন। তারই নামানুসারে স্থাপিত নবীননগর গ্রামের ২৪০ ঘর প্রজার মধ্যে মুসলমানদের জন্য করা হয় মাটির একটি মসজিদ। সে সময় থেকে অবিভক্ত ভারত-পাকিস্তানের নবীননগর গ্রামের মুসলমানরা নামাজ পড়তেন। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগ হলেও উভয় দেশের মুসলিমরা ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে দু’অংশে বিভক্ত নবীননগর গ্রামের মুসলমানরা নিজ উদ্যোগে ইট পুড়িয়ে মসজিদটি পাকা করেন। তবে অর্থাভাব ও ইট সংকুলন না হওয়ায় বারান্দার অংশে ছাদ করতে পারেননি তারা। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ অংশে নবীননগর খালপাড়াতে একটি নতুন মসজিদ তৈরি হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ লোক নতুন মসজিদে নামাজ পড়েন।
নবীননগর খালপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৮০) জানান, ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে ভারত সরকার নবীননগর গ্রামের ভারতের অংশের ২০০ ঘর মানুষকে সরিয়ে নেয় ভারতের আরও ভেতরে। ২০০৩ সালে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সময় নবীননগর গ্রামের ভারতের ওই অংশ কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে চলে যায়। বাকি ৪০ ঘর লোক নবীননগর খালপাড়াতে বাস করছেন। আন্তর্জাতিক সীমানার শর্তানুসারে ভারতের কাঁটা তারের দেড়শত গজ বাইরের অংশে এবং বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে ভারতের অংশে পড়ে শতবর্ষী ওই মসজিদটি। প্রথম থেকে আমি ও হিসাব আলীসহ (৬০) কয়েকজন বৃদ্ধ আমরা পুরোনো ওই মসজিদে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যাবাতি দিচ্ছি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছি। বাকি জীবনটা এ মসজিদে নামাজ পড়ে যাবো।
নবীননগর খালপাড়া গ্রামের হিসাব আলী জানান, দেশ বিভাগের পরও উভয় দেশের মুসলমানরা গ্রামের এ একটি মসজিদে নামাজ পড়তাম।
এমনকি উভয় দেশের নবীননগর গ্রামটির মুসলমানরা চাঁদা তুলে ইট পুড়িয়ে মসজিদটি পাকা করেছি। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, বিজিবি-বিএসএফ মসজিদটি পাশে বসে পতাকা বৈঠক করে। আমরা তাদের সামনে মসজিদে গিয়ে আজান দেয় ও নামাজ পড়ি। কারো কোনো আপত্তি থাকে না। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি; তারা নামাজ পড়তে নিষেধ করেনি। বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি রক্ষণা-বেক্ষণ করার জন্য বলেছেন।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম বলেন, মসজিদ একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সেখানে নামাজ পড়তে নিষেধ করা যাবে না। তবে মসজিদটি ভারতের মাটিতে কাটা তারের বাংলাদেশ পারে অবস্থিত। তাই যাতে মুসল্লিরা কোনো ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত না হন; সেদিকে আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) লক্ষ্য রাখবেন।