স্টাফ রিপোর্টার: কুষ্টিয়া জেলা সদরের হরিনারায়ণপুরের শিশু সানজিদা খাতুন(৬) হত্যার নেপথ্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ১৫ ঘণ্টার মাথায় এক মাইক্রোবাস চালকের সহযোগিতায় পুলিশ ওই শিশু হত্যকারী তারই এক আত্মীয়া কিশোরীকে শনাক্ত করে। অবাক হলেও সত্য যে, চানাচুর খাওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে কিশোরী ওই শিশুকে গ্রামের অদূরবর্তী মাঠের পরিত্যাক্ত সৌচাগারে নিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে। হত্যার পর কিশোরী দিব্যি বাড়ি ফেরে। স্বাভাবিক আচারণও করে। যখন লাশের সন্ধান মেলে তখনও ওই কিশোরী স্বাভাবিক থেকে লাশের পাশেই ঘোরাফেরা করে। নেপথ্য উন্মোচনের পর পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা এসব তথ্য দিয়ে বলেছেন, নিহত শিশুর মায়ের সাথে হত্যকারী শিশুর মায়ের বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জের ধরে কিশোরী এরকম অপরাধ করে বসেছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর এলাকায় মাঠের পাশের একটি পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে ছয় বছরের শিশুর লাশ রোববার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিশু সানজিদা খাতুন (৬) হরিনারায়ণ এলাকারই সোহাগ হোসেনের মেয়ে। তাকে হত্যা করায় এক কিশোরীকে আটক করেছে পুলিশ। তার মুখ থেকেই বের হয়েছে চাঞ্চল্যকর তথা।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার পরপরই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও আতিকুর রহমান (সদর সার্কেল) ঘটনাস্থলে যান। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেন। একটানা নয় ঘণ্টা কাজ শেষে রাত ৩ টার দিকে তাঁরা নিশ্চিত হন, শিশুর এক কিশোরী স্বজন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। তাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে রাতেই থানায় নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুর রহমান বলেন, রাতেই পরিবারের সব সদস্যকে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সারা দিনের চাল-চলন বিষয়ে নানা কথা শোনা হয়। পরিবারের সব সদস্যই স্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। রাত ১২টার দিকে ওই এলাকার এক মাইক্রোবাস চালক আকতার হোসেন পুলিশকে জানান, বাড়ির এক কিশোরীকে তিনি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মাঠের পাশের পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে বের হতে দেখেছেন। এ তথ্য পাওয়ার পর কিশোরী স্বজনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে সে শিশু সানজিদাকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
ওই কিশোরী তাদের বলেছেন যে শিশুটির মায়ের সঙ্গে তার ও তার মায়ের পারিবারিক কলহ চলছে। সানজিদার মাকে শিক্ষা দিতেই এই হত্যার পরিকল্পনা করে সে। ঘটনার দিন বিকেলে চানাচুর কিনে খাওয়ার জন্য সানজিদাকে নিয়ে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ভূমি কার্যালয়ে যায়। সেখানে দুজন মিলে চানাচুর খায়। এরপর শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করে কিশোরী বাড়িতে ফিরে যায়।
সানজিদার বাবা সোহাগ হোসেন বলেন, সানজিদা দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন আশপাশে খোঁজা শুরু করেন। একপর্যায়ে মেয়ের সন্ধান চেয়ে বিকেলে হরিনারায়ণপুর বাজারে মাইকিং করেন। এরপরও হদিস মেলেনি। সন্ধ্যার পর এলাকার কয়েকজন কাচারি মাঠের পাশের পরিত্যক্ত শৌচাগারে শিশুটির লাশ পড়ে থাকার খবর দেয়। সানজিদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওই কিশোরী স্বজনও ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুর রহমান বলেন, থানায় হত্যা মামলা হবে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
৭ কার্যদিবসে ধর্ষণ মামলা বিচার সম্পন্ন : ধর্ষকের আমৃত্যু কারাদণ্ড
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ