ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে অল্প আয়ের পরিবারগুলো
আনোয়ার হোসেন: চুয়াডাঙ্গার বাজারগুলোয় লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রযোজনীয় দ্রব্যের মূল্য। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নি¤œআয়ের মানুষেরা। কোনোভাবেই যেনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। হু-হু করে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। ধানের বাম্পার ফলন হলেও মাত্র দুই সপ্তাহে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম প্রকারভেদে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। অনেকটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙা, করলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজি। মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে ডিমের দাম প্রতি ডজনে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। মুরগি আকার ও প্রকারভেদে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গার বাজারে ঘুরে নিত্যপণ্যের দামে এ চিত্রের দেখা মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার মহামারী করোনার মাঝেও সফলতার সাথে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। ফলে চাল সংকটের সুযোগ নেই। তারপরও দাম না কমে উল্টো প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ৪ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ চাল মজুদ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে খাদ্য অধিদফতর। সংস্থাটি দেশের সব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, ‘এসময় চালের দাম এতোটা বাড়ার কথা নয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ মজুদ করছে কিনা, তা অনুসন্ধান শুরু করেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে চালের দাম চালকলগুলো থেকেই ১ থেকে ২ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে। বড় হাটগুলোয়ও ধানের দাম বাড়ছে। ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে মোটা ধান প্রতিমণ ৮৫০ থেকে ৯৫০, মাঝারি মানের ধান ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ও সরু ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০, মাঝারি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরু চালের দাম গত এক সপ্তাহে আড়াই শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মান ও বাজার ভেদে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। বেগুনের কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, কাচকলা ৪০ থেকে ৪৫, পেপে ২৫ থেকে ৩০, কচু ৫০ থেকে ৬০, পটল ৩৫ থেকে ৪০, বরবটি চিচিঙ্গা ও ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০, করলা ৫০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০, কচুর মুখি, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা ইমরান বলেন, কয়েকদিন ধরেই সবজির দাম বেড়েছে। মরসুম শেষ। সহসা দাম কমবে না। হাতিরপুলের বিক্রেতা শাহিন সরদার বলেন, করোনার শুরুতে দাম অনেক কম ছিলো। এখন সবজি ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে দাম কিছুটা চড়া। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৩০-৩৫ টাকা। সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। বয়লার মুরগির কেজি ১৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। লিয়ার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। গরুর মাংস ৫৫০ ও খাসির মাংস ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারে দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি টেংরা মাছ (তাজা) ৬৫০ থেকে ৭৫০, দেশি টেংরা ৪৫০ থেকে ৫৫০। শিং (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০, পাবদা ৩২০ থেকে ৫০০, চিংড়ি (গলদা) ৪০০ থেকে ৬৫০, বাগদা ৫৫০ থেকে ৯৫০, হরিণা ৩৮০ থেকে ৫০০, দেশি চিংড়ি ৪০০ থেকে ৪৬০, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০, মৃগেল ২০০ থেকে ৩০০, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৩০, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৪০, কাতল ২২০ থেকে ৩২০ টাকা। বর্তমানে এসব বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০ থেকে ৮০০, ছোট ইলিশ আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি।
কাঁচাবাজারে কথা হয় গুলশানপাড়ার লাভলী আক্তার ও বৃষ্টি খাতুনের সঙ্গে। তারা মাথাভাঙ্গা এ প্রতিবেদককে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। তবে এর জন্য দায়ী অনেক ক্রেতা। করোনা আতঙ্কে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জিনিসপত্র কেনার ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন ভুক্তভোগী আমরা সাধারণ ক্রেতারা। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নি¤œ আয়ের মানুষ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে জানিয়ে বাজার করতে আসা মালোপাড়ার আতিকুর রহমান, রাজিয়া সুলতানা ও মাঝেরপাড়ার পিয়াস অভিন্ন ভাষায় বলেন, করোনাকালে মানুষ এখন আর্থিক দিক থেকে অনেক দুর্বল। তারপরেও নিত্যপ্রয়োজনী জিনিেিসর দাম চড়া।
ব্যবসায়ী মিলন, রবিউল ও মানিক বলেন, বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। দু’দিন ধরে বাজারে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি। মাল কিনছি বেশি দামে, ক্রেতাদের কাছে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। বর্তমানে বাজারে কিছু পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্ডার দিয়েও কিনতে পারছি না।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ