বৃদ্ধ দম্পতির দায়িত্ব নিলেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: আফু মোল্লার ৯ সন্তান থাকলেও এখন খোঁজ নেয় না কেউ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া স্বামী-স্ত্রীর দু’বেলা দুই মুঠো খাবারের কোনো গ্যারান্টি নেই। ৩০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন তিনি। কিন্তু তিন ছেলে কৌশলে সব জমি লিখে নিয়েছেন। ফলে অন্য সন্তানরা এতে ক্ষুব্ধ। তাই তারা পিতা-মাতার খোঁজখবর রাখেন না। আর যারা ভুলভাল বুঝিয়ে জমিজমা সব নিজেদের নামে লিখে নিয়ে তারা এখন লাপাত্তা। এ কারণে বৃদ্ধ আফু মোল্লা আর তার স্ত্রীর এখন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিলো। পাড়া প্রতিবেশীদের দয়া নিয়ে কোনোমতে বেঁচে ছিলেন তারা।
সংবাদ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম দুই মাসের জীবনযাপন সামগ্রী নিয়ে ছুটে আসেন আলমডাঙ্গার কৃষ্ণপুর গ্রামের অসহায় আফু-রেশপতি দম্পতির বাড়িতে। পুলিশ সুপারকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। পুলিশ সুপার তাদেরকে পিতা-মাতার মর্যাদায় জীবন যাপনের দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন পোশাক, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, চিকিৎসার ওষুধসহ নগদ অর্থ প্রদান করেন। সেখানে আফু-রেশপতি দম্পতির সাথে পুলিশ সুপার আবেগঘন কিছু সময় কাটান এবং তিনি বলেন আমাদের প্রত্যেকের উচিত পিতা-মাতাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে খেদমত করা।
আফাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে আফু মোল্লা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামবাসী জানান, কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হুজুর আলী মোল্লার ছেলে আফাজ উদ্দিন ওরফে আফু মোল্লার বয়স একশ’ বছরের ওপরে। তার প্রথম স্ত্রী দুই পুত্র সন্তান রেখে মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী রেশপতি বেগমের গর্ভে আসে পর পর সাত সন্তান। এর মধ্যে চার মেয়ে আর তিন ছেলে। বছর তিনেক আগে রেশপতি বেগম প্যারালাইজড হয়ে বিছানা নিয়েছেন। আর আফু মোল্লাও বয়সের ভারে তেমন চলাচল করতে পারেন না। তাদের তিন পুত্রসন্তান শহিদ মোল্লা, হাবিবুল মোল্লা ও মেহেদুল মোল্লা বেশ সম্পদশালী। তারা কয়েক বছর আগে পিতা-মাতার কাছ থেকে প্রায় ৩০ বিঘা জমি তাদের স্ত্রী ও তাদের নিজের নামে লিখে নেন। এরপর তাদেরকে একরকম নির্বাসনে পাঠায়। সেই থেকে তারা স্বামী স্ত্রী গ্রামের রাস্তার ধারের একটি টিনশেডে বসবাস করে আসছেন। যেখানে তাদের সন্তান বা নাতিপুতি কেউই থাকেন না। জমি লিখে নেয়ার পর সন্তানের মধ্যে শহীদ মোল্লা বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন। অন্য দুই সন্তান প্রবাসী। একজন থাকেন ইতালি অন্যজন কুয়েতে। তাদের স্ত্রী বা তারা এখন আর খোঁজখবর রাখেন না বৃদ্ধ পিতা-মাতার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা রেশপতি বেগম বিছানায় পড়ে আছেন। তার বাম দিকটা অচল। ঘরের এ মাথা ও মাথা গড়িয়ে গড়িয়ে চলেন। বৃদ্ধ আফু মোল্লা নিজের মতো কোনোরকম চলাচল করতে পারেন। তিনিই এখন স্ত্রীর হিল্লা। আফু মোল্লা কেঁদে কেঁদে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন ‘আমার তিন ছেলে বড়লোক। তারা বড় বড় বাড়ির মালিক। তারা আমার কাছ থেকে জমিজমা সব লিখে নিয়েছে। এখন আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না। অন্য ছেলে-মেয়েও আমাদের দেখে না। কী যে যন্ত্রণায় আছি তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আগে কোনো কোনো বিটার বউ (পুত্রবধূ) এক আধটু খেতে দিতো, এখন তাও দেয় না। আমাদের দুর্দশা দেখে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ খাবার দিয়ে যায়। কিন্তু এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? গ্রামের স্কুলশিক্ষক আনছার আলী জানান, আফু মোল্লার যে ছেলেরা জমিজমা ফাঁকি দিয়ে নিয়েছে তারা দেশের বাইরে থাকে। তাদের স্ত্রীরাও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কোনো খোঁজ খবর রাখে না। ফলে তারা এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন। এলাকার ইউপি মেম্বার ওহিদ আলী জানান, ‘আফু মোল্লা ও তার স্ত্রী রেশপতি বেগমের খুব ভোগান্তি যাচ্ছিলো। তাদের দেখা শোনাতো দূরের কথা দু’বেলা দু’মুঠো খাবার দেয়ার মতোও কেউ ছিলো না। গত ১ অক্টোবর এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে আসে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কৃষ্ণপুর গ্রামে উপস্থিত হয়ে অনাহারি আফু-রেশপতি দম্পতির সার্বিক দায়িত্ব নেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার-জাহিদুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, জেহালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসানউজ্জামান হান্নান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এসময় মানবিক পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন চুয়াডাঙ্গাবাসীর যে কোন প্রয়োজনে তার দুয়ার ২৪ ঘন্টা খোলা। তিনি সমাজের সর্বস্তরের সামর্থবান মানুষকে অসহায় সুবিধা বঞ্চিতদের দিকে একটু সু-দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সকল বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ