দর্শনায় ঈদের আগের দিন মারা যাওয়া প্রভাষক হাজি আব্দুল হামিদ কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিলেন : জেলায় মোট মৃত্যু ১১
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে জেলায় কোভিড-১৯ পজিটিভ ১১ জনের মৃত্যু হলো। এদিকে মঙ্গলবার আরও ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮৮ জনে। মঙ্গলবার আরও ১০ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থতার সনদ পেয়েছেন ৩শ’ ৪৪ জন। মঙ্গলবার আরও ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪ দিনে নতুন ৮০ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন ১০ জন, ঈদের দিন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারসহ ২৫ জন, ঈদের একদিন পর ৩ আগস্ট শনাক্ত হয় ১৫ জন।
মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে মোট ৫১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ৩০ জনের পজিটিভ। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৬ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯জন ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ জন। জেলা সদরের ১৬ জনের মধ্যে পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার ২জন, বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়ার ১জন, থানা কাউন্সিলপাড়ার ১জন, স্বাস্থ্য সহকারী একজন, সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার ১জন, সাতগাড়ির ১জন, আলুকদিয়ার ১জন, দৌলাতদিয়াড়ের ১জন, মাঝেরপাড়ার ১জন, আরামপাড়ার ২জন, সদর হাসপাতাল সড়কের ১জন, জাফরপুরের ১জন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ২জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৯ জনের মধ্যে হারদির ২ জন, ওসমানপুরের ১জন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন এফ ডাবলু, মিয়াপাড়ার ১জন, খেজুরতলার ১জন, মুন্সিগঞ্জ জেহালার ১জন ও ব-বিলের ১ জন। দামুড়হুদা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে দর্শনা পুরাতন বাজারপাড়ার ১জন, লোকনাথপুরের ১জন, দামুড়হুদা থানা পাড়ার একজন, দর্শনা হল্ট চাঁদপুরের একজন ও কার্পাসডাঙ্গার ১জন। এ দিয়ে জেলায় মোট ৬শ ৮৮জন আক্রান্ত হলেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৪৪ জন। মঙ্গলবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ৪৬ জন ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২শ ৮৫ জন। মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ৬৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। অপরদিকে দর্শনা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক আব্দুল হামিদ করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ঈদের আগের দিন শুক্রবার সকালে তিনি নমুনা দেন সন্ধ্যায় মারা যান। সোমবার তার পরীক্ষার রিপোর্ট চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসে। এদিন চুয়াডাঙ্গায় আরও ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ জনের শরীরে। এদিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫৮। ঈদের পর দুদিনে সুস্থ হয়েছেন আরও ৩০ জন। এনিয়ে সোমবার পর্যন্ত সুস্থতার সনদ পান মোট ৩৩৪ জন। সোমবার চুয়াডাঙ্গায় জেলায় নতুন যে ১৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরেই ১২ জন। অপর তিন উপজেলায় একজন করে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসকও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ জনে। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের পর তার পরিবারের আরও ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া গাইদঘাটের একজন, বাগানপাড়ার ১জন, পল্লি বিদ্যুতের হাতিকাটা অফিসের একজন, বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়ার ১জন, রেলপাড়ার ১জন। আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার একজন, দামুড়হুদার দর্শনা কলেজপাাড়ার ১জন ও জীবননগর হাসাদহের একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সোমবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ৫৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এর আগে ঈদের দিন রাতে স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে ৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামসহ ২৫ জনের করোনা পজিটিভ হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ঈদের দিন কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। এদিন যে ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকারই ১৭ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৩জন। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার ৪জন, ঈদগাপাড়ার ২জন, তালতলার ১জন, সাতগাড়ির ১জন, এসপি অফিসের একজন, বেলগাছির একজন, সদর হাসপাতালের ১জন, কোর্টপাড়ার ১জন, মুক্তিপাড়ার ২জন, রেলপাড়ার ১জন, বিদ্যুত অফিসের ১জন, পুরাতন হাসপাতালপাড়ার ১জন। আর জেলা সদরের একজন ডিঙ্গেদহ আনসার ব্যাটালিয়নের একজন। দামুড়হুদার তিন জনের মধ্যে দর্শনা পুরাতন বাজারপাড়ার ১জন, উজিরপুরের একজন, কানাইডাঙ্গার ১জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার সমাজ সেবা কার্যালয়ের একজন, স্টেশনপাড়ার ১জন ও আলমডাঙ্গা কোর্টপাড়ার ১জন। ঈদের আগের দিন চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে ১০ জনের পজিটিভ বাকি ১৯ জনের নেগেটিভ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় নতুন ১০ জনের করোনা শনাক্ত দিয়ে মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬১৬ জনে। শুক্রবার আরও ৬ জন সুস্থ হয়েছন। এ দিয়ে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হলেন ৩শ ৩জন। শুক্রবার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ৫৯ জন আর বাড়ি বা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ২শ ৪৪ জন। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আরও ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। এদিন নতুন শনাক্ত হওয়া ১০ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৮জন ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ২ জন। চুয়াডাঙ্গা সদরের ৮জনের মধ্যে কোর্টপাড়ার ১জন, সুবদিয়ার ১জন, জ্বিনতলা মল্লিকপাড়ার ১জন, গুলশানপাড়ার ১জন, পুরাতন ভা-ারদহের ১জন, সিনেমাহলপাড়ার একজন, দৌলাতদিয়াড়ের আরও একজন ও বাগানপাড়ার ১জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার দুজনের মধ্যে একজন কলেজপাড়ার অপরজন ওসমানপুরের।
এদিকে নমুনা দেয়ার পর পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে ঘুরছেন প্রায় সকলে। ফলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে কেউ কেউ বাজারে ঘুরছেন। হলুদজোনে থাকা একজনকে তো মানববন্ধন কর্মসূচিতেও দেখা গেছে। পরে তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে। এভাবে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই সংক্রমণ রোধে যেমন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন, তেমনই আক্রান্তদের প্রতি বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন মহল্লার অনেকে। চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার একটি সড়ক আটকে দেয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টির দিকে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে এলাকার সচেতনদের অনেকেই মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন।