হারিয়ে গেছে ফেরিঘাট : মল্লিকপাড়া ঘাটে ময়লার স্তুপ

নির্বাচন পরবর্তী চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিবেদন-৩ : দশাগ্রস্ততায় জীর্ণ ৪ নম্বর ওয়ার্ডও

শামসুজ্জোহা রানা: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন। তিনি তার ওয়ার্ডে পর পর ৫ বার নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ প্রায় ৩ যুগ ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে মাফিজুর রহমান মাফি চমক এনেছেন। একাধিকবার প্রার্থী হওয়া শেখ সেলিমের চেয়ে ১শ ৬৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন মাফি। পর পর ৫ বার নির্বাচিত হওয়া কাউন্সিলর এবং এবার বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকনের নিজ এলাকার হালচিত্র নিতে গিয়ে পাওয়া গেছে বিচিত্র দৃশ্য। হাতেগোনা কয়েকটি গলি সরু সড়ক নতুন করে ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হলেও বাকি রাস্তাগুলোর করুণদশা। কয়েকটি সড়ক ও পয়ঃনিষ্কাশন নালা ভেঙেচুরে একাকার। নোংরা পানি-কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর। এবার দুর্দশা দূর হবে বলেই এলাকাবাসীর বিশ^াস।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বাণিজ্যিক এলাকার প্রায় অর্ধেকটাই রয়েছে যে ওয়ার্ডে, সেই ওয়ার্ডটিই ৪নম্বর। নিচের বাজার, পুরাতন বাজার, জোয়ার্দ্দারপাড়া, বাজারপাড়ার, মাঝেরপাড়া, মাস্টারপাড়া, মল্লিকপাড়া ও শেখপাড়া নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৩শ ৭৩জন। রাহেলা খাতুন গালর্স একাডেমি, মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রেলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ওয়ার্ডের ভোটারা ভোট দেন। এবার ৪ হাজার ১৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ওয়ার্ডের বর্তমান অবস্থা জানতে গেলে এলাকাবাসী অন্য ওয়ার্ডের মতোই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘সব সময়ই শুনি উন্নয়ন হবে হবে। কবে হবে কে জানে? পৌরবাসীকে শত দুর্ভোগের মধ্যেই থাকতে হয়। গানের সুরে বলতে হয় এই বেশ ভালো আছি।’ মাঝেরপাড়ায় রয়েছে শাহ সুফি হযরত কেনায়েত আলীর দরবার ও মাজার। পাশেই মহল্লার ৪ রাস্তার মোড়। এই মোড় থেকে শেখরাতলা মোড়ের দিকে যাওয়া রাস্তাটা সংস্কার হয়েছে। আরও একটি এবারের ভোটের আগে নির্মাণ করা হবে বলে উদ্বোধন করেছেন তৎকালীন মেয়র। অপর দুটি রাস্তার দশা দেখলে মনেই হবে না এটা কোনো পৌর এলাকার রাস্তা। বিশেষ করে এই মোড় থেকে মসজিদপাড়ার দিকে যাওয়া রাস্তাটার অবস্থা খুবই খারাপ। যেমন রাস্তা ভাঙা, তেমনই ভাঙা-চুরা ড্রেন। ময়লা পানির রাস্তা মাড়িয়েই চলতে হয় এলাকাবাসীকে। মাঝে মাঝে ড্রেনের ময়লা তুলে রাস্তায় স্তুপ করে রাখা হয় দিনের পর দিন। ফলে পুরো এলাকা হয়ে ওঠে অস্বাস্থ্যকর। অবাক হলেও সত্য যে, এই এলাকাতেই রয়েছে একটি পৌর সরবরাকৃত পানির ট্যাঙ্ক। মাঝে মাঝে সরবরাহকৃত পানিতেও পাওয়া যায় নোংরা। দুর্গন্ধও থাকে সরবরহ করা পানিতে। ড্রেন ভাঙাচুরা হওয়ার কারণে মশা উৎপাদনের কারখানা হয়েছে। এলাকায় মশা আর মশা। এ দশা দীর্ঘদিনের। জি¦নতলা মল্লিকপাড়ার পাশেই রয়েছে একটি মহল্লা। রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে দিনের পর দিন রাখার কারণে পরিবেশটাই হয়ে উঠেছে দূষিত। এ অবস্থা এখনই নয়, মাঝে মাঝেই হয় বলে জানালেন মহল্লাবাসী। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বর। এ চত্বর থেকে ফেরিঘাট সড়কটি ফেরিঘাট হয়ে রাহেলা খাতুন গালর্স একাডেমির সামনে দিয়ে শেখরাতলা মোড় হয়ে চলে গেছে হাজরাহাটির দিকে। অবাক হলেও সত্য যে, সড়কটির নাম যে কারণে ফেরিঘাট হয়েছে সেই ফেরিঘাটটিই কালক্রমে হারিয়ে গেছে। তবে মল্লিকপাড়ার ঘাটটি রয়েছে। তাও আবার ময়লা ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। নদীর তীরে পৌরসভা ময়লা ফেলে কার জমি ভরাট করছে? এলাকাবাসীর কাছে এ প্রশ্নের জবাব অজানা। এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের দাবি, পূজা-পার্বনে মুক্তঘাট প্রয়োজন হয়। প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কয়েক বছর ধরে মল্লিকপাড়া ঘাটটি ব্যবহার করা হয়। এই ঘাটটি পৌরসভার তরফে বিশেষ সংরক্ষণ করা হলে উপকৃত হবে এলাকাবাসী। কালীপদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার রাস্তার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কোনায় মহল্লাবাসীদের ময়লা ফেলতে হয়। ফলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। প্রতিদিন সকালে বিকেলে নিয়ম করে ময়লা নেয়ার ভ্যান এসে বাসি বাজালে এবং মহল্লাবাসী সচেতন হলে এলাকার পরিবেশ বসবাসের উপযোগী হবে। মহল্লারই সচেতন বেশ ক’জন এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, বিশে^র সবকিছুতেই আধুনিকায়ন হচ্ছে, হচ্ছে না শুধু মহল্লাবাসীর ময়লা আবর্জনা ফেলার পদ্ধতিতে। তবে তাদের প্রায় সকলেরই অভিমত, নতুন প্রজন্মের একজন কাউন্সিলর হয়েছেন, এবার বোধ হয় ওয়ার্ডবাসী আধুনিকায়নের ছোঁয়া পাবে।

নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মাফিজুর রহমান মাফি তার ওয়ার্ডের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেছেন, নবনির্বাচিত মেয়র আমার ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। দীর্ঘদিন তিনি কাউন্সিলর ছিলেন। ফলে প্রতিটি রাস্তা-গলি মহল্লার সবই তার নখদর্পণে। মেয়রকে সাথে নিয়ে আমার ওয়ার্ডকে নতুনভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে। ওয়ার্ডবাসীর পাশে নিয়ে তাদের পরামর্শেই আমি আগামীদিনে কাজ করতে চাই। সকলে পাশে থেকে দোয়া করলে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিশ^াস আমার রয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More