খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ঝিনাইদহের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায়
স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের সেনাসদস্য সাইফুল ইসলাম সাইফ হত্যা মামলায় ৮ আসামিকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। একইসাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.নজরুল ইসলাম হাওলাদার গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন মো. আকিমুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান মিজান, মো. ডালিম মোল্লা, মো. আব্বাস আলী, মো. কাশেম ম-ল, মো. ফারুক হোসেন, মো. মতিয়ার রহমান, মো. মোক্তার হোসেন ওরফে মোক্তার ম-ল। এর মধ্যে ডালিম মোল্লা, মতিয়ার রহমান ও মোক্তার হোসেন পলাতক রয়েছেন। রায় ঘোষণার পর অন্য ৫ আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত সাইফুল ইসলাম সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পদে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল আর্মি মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ সদরের বংকিরা পশ্চিমপাড়া এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে করে পাশের চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ বাজার (দশমাইল) থেকে ছোট ভাই নৌবাহিনীর করপোরাল মনিরুল ইসলাম ও শ্বশুর শামসুল মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা (পশ্চিমপাড়া) ফিরছিলেন সাইফুল ইসলাম সাইফ। পথে বেলতলা দাড়ির মাঠ নামক স্থানে ডাকাত দল তাদের ওপর হামলা করে। সাইফ তাদেরকে চিনে ফেলায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করে ডাকাতরা। নিহত সাইফুল ইসলাম সাইফ টাঙ্গাইলের শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসের মেডিকেল ট্রেনিং সেন্টারে সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনার একদিন আগে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি।
ঘটনার পর তার বাবা মো. হাফিজ উদ্দিন বিশ্বাস বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট ঝিনাইদহ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের (১নং) আসামি আকিমুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্য মতে, হত্যায় ব্যবহার করা দা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় এবং হত্যার সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে দেন তিনি। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মহসীন হোসেন ৮জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন। গতকাল বুধবার আদালত এ মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে পাঁচ আসামি উপস্থিত ছিলেন। অন্য তিনজন পলাতক রয়েছেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার বোড়াই গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, চুয়াডাঙ্গার ভুলটিয়া গ্রামের মৃত সবেদ আলী মোল্লার ছেলে ডালিম মোল্লা, আসাননগর গ্রামের নবী মোল্লার ছেলে মো. আব্বাস আলী, একই গ্রামের মৃত রমজান ম-লের ছেলে মো. আবুল কাশেম, মৃত সাহেব আলীর ছেলে মো. ফারুক হোসেন, বংকিরা গ্রামের মো. ইয়াকুব্বর ম-লের ছেলে মো. মতিয়ার রহমান ওরফে ফনে এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের দাউদ ম-লের ছেলে মো. মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার। পলাতক তিনজন হলেন মো. মতিয়ার রহমান ওরফে ফনে, মো. মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার এবং ডালিম মোল্লা। ডালিম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল আহদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনাসদস্য মো. সাইফুল ইসলাম সাইফের পরিবারের সদস্যরা। নিহতের স্ত্রী শাম্মি আক্তার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মার্শাল আর্টে স্বর্ণপদকজয়ী। তিনি বলেন, ছোট ছেলে আবু হামজার বয়স এখন ৪ বছর। সে এখনো তার বাবা আসবে বলে অপেক্ষায় থাকে। বড় ছেলে আবু হুরাইরার বয়স ৮ বছর। সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আমার স্বামী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে মনে। তবে এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাই।
নিহতের চাচা আফিজ উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, খুনিদের সবাই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ডাকাতি করতে গিয়েই তারা সাইফুলকে নির্মমভাবে খুন করে। এই খুনের বিচার পেয়ে আমরা একটু হলেও স্বস্তি পেয়েছি। এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাই।
নিহত সাইফুল ইসলাম সাইফের মা বুলবুলি খাতুনও একই দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খুনিরা আমার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমি সন্তানহারা হয়েছি। আমার ছেলের দুই ছেলে তার বাবাকে হারিয়েছে। এমন নির্মম হত্যার রায় যদি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হয় তবেই সাইফুলের আত্মা শান্তি পাবে।