চুয়াডাঙ্গা-জীবননগরে শহরে দখলমুক্ত করতে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরে সড়কের দু’ধারের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ড্রেন ও ফুটপাত দখল করে চলাচলে বিঘœ ঘটানোর দায়ে সাতজনকে করা হয়েছে জরিমানা।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে হাসপাতাল সড়কের আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। নিয়ম না মেনেই নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটি। পাঁচতলার আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে করা হয়েছে ছয়তলা বাণিজ্যিক ভবন। মানা হয়নি সড়ক থেকে ভবনের নির্ধারিত দূরত্বও। গতকাল বুধবার দুপুরে আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে পরিচালিত অভিযানে পৌরসভার নির্দেশনা মেনে ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়া। সাতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। সাতদিন পর বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বন্ধ করে দেয়া হবে হাসপাতালটি।
এছাড়া, জীবননগর পৌর শহরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আড়াই একর জমি দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার সময় এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। প্রথম দিন অভিযান চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত অবশিষ্ট স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।
চুয়াডাঙ্গায় সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকানের মালামাল রাখায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্নস্থানে এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। এ সময় দোকানের মালামাল সড়ক ও ড্রেনের ওপরে রাখায় চলাচলে বিঘœ ঘটায় সাতজনকে ২ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরকারি কমিশনার (ভূমি) মাজহারুল ইসলাম।
অভিযানে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় থেকে বড় বাজার পর্যন্ত ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখল করে বিভিন্ন খাবারের দোকান-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের মালামাল ও বিলবোর্ড বাইরে সাজিয়ে রাখেন। পরে সেগুলো অপসারণ করানো হয় এ অভিযানে। অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে মোটরসাইকেল পার্কিং, ইট, বালুসহ নির্মাণসামগ্রী রেখে জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটার অপরাধে ৭ জনকে মোট ২ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এদিকে, দখলমুক্ত করতে সমবায় নিউ মার্কেটের সামনে রতন ফুড, সাম্পান, খন্দকার সুইটস প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল ড্রেন দখল করে রাখা ছিল। পরে সেগুলো জব্দ করে পৌরসভার নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার সিইও শামীম ভূইয়া। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। ফুটপাতে নির্মাণ সামগ্রী ও দোকানের মালামাল রেখে জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটানোর দায়ে ৭ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা থেকে এক রকম প্লান পাস করে অন্যভাবে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে। পাঁচতলার অনুমোদন থাকলেও নির্মাণ করা হয়েছে ছয়তলা। ঝুকিপূর্ণ ৬ তলার ওই ভবনের নিচতলায় দোকানপাট এবং ওপরে ক্লিনিক ও প্যাথলজির কার্যক্রম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। এছাড়াও সড়ক থেকে পাঁচ ফুট দূরত্বে ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও সেটা মানা হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি ওই ভবনটি ঝুকিপূর্ণ। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভুইয়ার নেতৃত্বে আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভবন মালিক ডা. হোসনা জারি তাহমিনা আঁখি পৌর কর্তৃপক্ষের এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি। পরে বিষয়টি সমাধানে এক সপ্তাহ সময় বেধে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। আদেশ অমান্য করলে ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাস বলেন, আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালের ভবনটি পাঁচতলার অনুমতি নিয়ে সেখানে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আবাসিক ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে বাণিজ্যিক ভবন। ভবন নির্মাণের সময় পৌরসভার নির্দেশনা অনুযায়ী রাস্তা থেকে পাচ ফুট দূরত্বে নির্মাণ করার কথা থাকলেও তিনি সেই নিয়ম পালন করেননি। ভবনটি এখন ঝুকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে একটা অঘটন ঘটতে পারে। আমরা এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। আদেশ না মানলে এক সপ্তাহ পর বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমার চুয়াডাঙ্গাবাসীর সহযোগিতা চাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে আধুনিক শহর গড়ে তুলবো।
জীবননগর ব্যূরো জানিয়েছে, জীবননগর পৌর শহরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আড়াই একর জমি দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন বুধবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে সওজ। জীবননগর বাসস্ট্যান্ড থেকে দত্তনগর সড়ক, কালীগঞ্জ সড়ক এবং চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবশিষ্ট ১শ দোকান ভেঙে ফেলা হবে। এর আগে ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে জীবননগর পৌর শহরে সড়ক ও জনপথের যায়গার ওপর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দিতা রায়ের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজে অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ ও জীবননগর থানা পুলিশের ২২ জন সদস্য এবং জীবননগর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানান, জীবননগর পৌর শহরে সড়ক ও জনপথের যায়গার উপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দু’শতাধিক স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়। চলতি মাসের ২১, ২২ ও ২৩ তারিখে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। গতকাল বুধবার এবং আজ বৃহস্পতিবার এ দু’দিনে জীবননগরের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে এলাকার সচেতনমহল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। একই সাথে সচেতন মহল জীবননগর বাসস্ট্যান্ড থেকে চ্যাংখালী সড়কের দু’ধারের অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য জেলা পরিষদের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।