সাংবাদিকতা মহৎ পেশা-নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করবেন তাহলে মানুষ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির শপথ ও অভিষেক অনুষ্ঠানে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি
বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির ফুলেল শুভেচ্ছা অভিনন্দন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ
রফিকুল ইসলাম: সাংবাদিকতা কিন্তু একটি মহৎ পেশা। এর পেছন যারা শ্রম দেয়, সেই শ্রমের মর্যাদাও দেয়া হয়। আপনাদের দায়িত্ব অপরিসীম। আপনারা সঠিক সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করবেন। মানুষ যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনাদেরকে বলবো, একটু নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করবেন। তাহলে মানুষ ও রাষ্ট্র উপকৃত হবে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে নির্বাচিত পরিষদের শপথ ও অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। তদানীন্তন পাকিস্তানের সাংবাদিক তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া, জহির আহম্মেদ, সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ কিংবদন্তী সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘এনাদের কলাম পড়তে মানুষ উম্মুখ হয়ে থাকতেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। নিরপেক্ষ থেকে লেখার চেষ্টার করবেন। যদিও কাউকে ১৬ আনা নিরপেক্ষ করা যায় না। নিরপেক্ষতা শতভাগ সমান হয় না, কেউ না কেউ কোনো ব্যক্তি, কেউ না কেউ কোনো দলের পক্ষে, কেউ না কেউ রাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নেয়। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।’ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় দায়িত্বপালনকারী বিবিসির সাংবাদিক মার্কটালীর সাহসী ভূমিকার কথা তুলে ধরে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আপনাদেরকেও সাহসী হতে হবে। যারা হলুদ সাংবাদিকতা করেন, তাদেরকে তা অ্যাভয়েড করতে হবে। হলুদ সাংবাদিকতা যদি পরিহার না করেন, রাষ্ট্র, মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হলুদ সাংবাদিকতায় মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে।’ স্মৃতি হাতড়ে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আইয়ুব খানের আমলে মাওলানা ভাসানী চায়না থেকে ফেরার পর তিনি চিটাগাং এয়ারপোর্টে নামছিলেন। সাংবাদিকরা উনাকে ধরে বললেন, হুজুর কী দেখলেন চায়নায় গিয়ে? উনি বললেন, কথা কম কাজ বেশি করতে হবে। পরদিন সংবাদে ছাপা হলো সারাজীবন কথায় বলেছি, কাজ করেনি।’ চুয়াডাঙ্গার অভিজাত রেঁস্তোরা রেডচিলিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শপথ গ্রহণ ও অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর অতিথিদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নির্বাচনকালীন আহ্বায়ক বর্ষীয়ান সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে পর্যায়ক্রমে সাংবাদিক সমিতি ও প্রেসক্লাবের ২০২৪-২৫ মেয়াদে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের শপথপাঠ করানো হয়। শপথ পাঠ করান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সোহরাব হোসেন। শপথ গ্রহণ শেষে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি রাজীব হাসান কচির সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রেসক্লাবের সহ-সম্পাদক ইসলাম রকিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চাঁদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও নবনির্বাচিতদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা এবং আমরা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বিশেষকরে প্রশাসনযন্ত্রের সাথে জড়িতদের সাথে একটা মিল আছে। সোট হচ্ছে সবকিছুর কিছু কিছু জানতে হয়, আবার কিছু কিছুর সবকিছু জানতে হয়। আমাদের মধ্যে চরম এই মেলবন্ধন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের যে সুনাম আছে তা ধরে রাখতে হবে। আমরা চুয়াডাঙ্গাকে ব্র্যা-িং করি, আমাদের চুয়াডাঙ্গা, স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা, ক্লিন চুয়াডাঙ্গা। এই চুয়াডাঙ্গার মাটি অনেক আলোকিত মানুষের। আপনাদের সাথে আমাদের পারষ্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধন অটুট থাকবে সেটাই প্রত্যাশা করি। জেলার পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংবাদপত্রকে বলা হয় চতুর্থ স্তম্ভ। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সাংবাদিকদের এই দুটি প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিজয়ীদের প্রতি বলবো, আপনাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যারা জয়ী হতে পারেননি, তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করবেন। চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন। যার সুনাম আমি সবসময় করি। ইচ্ছা করে কাউকে বিপদে ফেলা, কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার চর্চ্চা আপনাদের ভেতর নেই। সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে, আসুন আমরা একসাথে কাজ করি। খুলনা বিভাগের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ট্রাস্ট্রি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,‘ প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনে কেউ জিতেছে, কেউ হেরেছে। মনে করি সকল সাংবাদিকদের বিজয় হয়েছে। আমি বলবো. আপনাদের বাইরে যারা আছে, তাদেরকে প্রতিষ্ঠানে নেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবেন। সবাই এক জায়গায় থাকবেন, ভ্রাতৃত্বের সাথে, বন্ধুত্বের সাথে চলবে। নিশ্চয়ই আপনাদের খ্যাতি আরও বিস্তৃতি হবে। ‘বিশেষ অতিথি চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন নবনির্বাচিত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গার সমস্যার পাশাপাশি সম্ভাবনার কথা লিখে ধরতে হবে। চুয়াডাঙ্গাকে সুন্দর করে সাজাতে আর কী কী করার প্রয়োজন তা নিজ নিজ পত্রিকা টিভিতে প্রকাশ করবেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সরদার আল আমিন। তিনি বলেন, সকল সদস্যের সহযোগিতায় আজকের এই অনুষ্ঠান সফল হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে গণমানুষের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে পেয়ে আমরা ধন্য। তিনি আমাদের অভিভাবক। তার নির্দেশনায় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন এবং আমাদের প্রিয় ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের উপস্থিতি আয়োজনকে সমৃদ্ধ করেছে। সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি রাজীব হাসান কচি আমন্ত্রিত সকল অতিথির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ধন্যবাদ জানান, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে শুভেচছা জানাতে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের। তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন ছিলো প্রীতি ম্যাচ। ম্যাচটি শেষ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্যকে নিয়ে যাকে একসাথে কাজ করতে পারি সেটাই প্রত্যাশা।’ এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের সভাপতি ও রেডচিলি-ভিআইপি হোটেলের স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান জোয়ার্দ্দার মিজাইল। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান (পিপিএম সেবা), দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবারের পক্ষে বার্তা সম্পাদক আহাদ আলী মোল্লা ও শিফট ইনচার্জ সিনিয়র সাংবাদিক আলম আশরাফ, চুয়াডাঙ্গার সমবায় নিউ মার্কেটের পক্ষে সভাপতি মাহফুজুর রহমান জোয়ার্দ্দার মিজাইল ও জুয়েল রানা, চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু ও সেলিম রেজা, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহান ও নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, জেলা পরিবেশক সমিতির পক্ষে মাহবুব আলম জোয়ার্দ্দার রিঙ্কু ও সভাপতি মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পক্ষে সভাপতি মাসুদুর রহমান ও হাফিজুল হক লাভলু, দৈনিক আমাদের সংবাদ পরিবারের পক্ষ থেকে সম্পাদক-প্রকাশক রুহুল আমিন রতন, চুয়াডাঙ্গা আন্তঃজেলা ট্রাক ও ট্রাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মামুন অর রশিদ, অটোবাইক মালিক শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মমতাজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাজু, বাংলাদেশ টেলিকম প্লাস এর স্বত্বাধিকারী মাইনুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার রিপন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার কুন্ডু, চুয়াডাঙ্গা অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিডি নিউজ ২৪.পড়স এর সম্পাদক-প্রকাশক আনজাম খালেক, হেলথ এইড মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে উজ্জ্বল মাসুদ ও ইমন সরকার, চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের পরিচালক কিশোর কুমার কুন্ডুসহ চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষে দুটি কমিটির নবনির্বাচিত সদস্যদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে ২০২৪-২৫ সালের চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা হলেন, রাজিব হাসান কচি (সভাপতি) রফিক রহমান (সহ-সভাপতি) বিপুল আশরাফ (সাধারণ সম্পাদক) ইসলাম রকিব (সহ-সাধারণ সম্পাদক) আতিয়ার রহমান (অর্থ সম্পাদক) জহির রায়হান সোহাগ (সাংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক) সোহেল সজিব (ক্রীড়া সম্পাদক) আবুল হাশেম (দপ্তর সম্পাদক) কার্যকরী সদস্য শাহ আলম সনি, আজাদ মালিতা, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, শামীম রেজা এবং পলাশ উদ্দিন। দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে ২০২৪-২৫ সালের বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা হলেন, সরদার আল-আমিন (সভাপতি) মো: খাইরুল ইসলাম (সহ-সভাপতি) কামরুজ্জামান চাঁদ (সাধারণ সম্পাদক) রেজাউল করিম লিটন (সহ-সাধারণ সম্পাদক) আলমগীর কবির শিপলু (অর্থ সম্পাদক) আনজাম খালেক (সাংস্কৃতিক ও প্রকাশনা সম্পাদক) খাইরুজ্জামান সেতু (ক্রীড়া সম্পাদক) সনজিত কর্মকার (দপ্তর সম্পাদক) কার্যকরী সদস্যরা হলেন, মাহতাব উদ্দিন, ফাইজার চৌধুরী, চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু, আহাদ আলী মোল্লা, রুহুল আমিন রতন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.