সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো
জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান
স্টাফ রিপোর্টার: শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকলকে সর্বাত্মক আন্তরিক হওয়ার পুনঃ আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, জেলা পুলিশসহ জেলায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারিসহ জেলার সকল সুনাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। স্বাভাবিক পরিবেশে সরকারি সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তরান্বিত হচ্ছে উন্নয়ন। এ পরিবেশ অব্যাহত রাখতে হবে। গতকাল রোববার বেলা ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জেলার সড়কগুলোতে চলাচলকারী সকল প্রকারের যানবহন চালক এবং পথচারিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ট্রাফিক আইন মেনে চলাচলের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমাতে হবে। মাদককে নিতে হবে শূন্যের কুঠায়। কোনভাবে মাদকের সাথে আপোষ চলবে না। মাদক সকল অপরাধমূলক কর্মকা-ের মূল। জেলা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গাস্থ কর্মকর্তা কর্মচারী, বিজিবির পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটগণ যথযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মতৎপরতা আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলকেও মাদক বিরোধ সামাজিক আন্দোলন তরান্বিত করা প্রয়োজন। বাল্যবিয়ে, নারী ও শিশু পাচার রোধে সংশ্লিষ্ঠরা সর্বদা সজাগ রয়েছেন। কোথাও এ ধরণের কর্মকা- হলে জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ থানায় খবর দিতে হবে। ট্রিপল নাইনে কল করে তথ্য দিয়েও প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। সকল বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সড়কগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। যেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে সেসব ক্যামেরা সচল রাখতে রক্ষনাবেক্ষণেও আন্তরিক হতে হবে। যেসব সড়কের পাশে পশু হাট বা সাপ্তাহিক হাট বসে সেসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিশেষ উদ্যোগে নিরাপত্তা প্রাচির নির্মাণ করার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত থেকে বত্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাত হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, জেলা জজ আদালতের বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. বেলাল হোসেন, জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিশেষ পিপি অ্যাড. আবু তালেব, বিআরটিএ কর্মকর্তা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা এডি মো. শরিয়তউল্লাহ, চেম্বার প্রতিনিধি পরিচালক নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মো. শামসুল হক, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দফতরের প্রধানগণ বক্তব্য রাখেন। পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন তার বক্তব্যে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা চিত্র সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জীবননগর এলাকায় একজন উঠতি বয়সীকে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেল চোর চক্রের বিরুদ্ধেও জেলা পুলিশ সজাগ রয়েছে। এক সময় যে বিষয়টিকে বলাৎকার বলা হতো, তা এখন ধর্ষণ হিসেবেই দেখা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে এ বিষয়ে সরাসরি ধর্ষণ মামলা নেয়া হয়। অজ্ঞানপার্টি ধরার চেষ্টা চলছে। তবে প্রতারকদের কবল থেকে রক্ষা পেতে সকলকে সজাগ হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। আসন্ন অমর একুশ তথা ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ আগামীতে জাতীয় বেশ কয়েকটি দিবস রয়েছে। এ দিবসগুলো যথাযথ পালনে পুলিশের পাশাপাশি সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান যানাচ্ছি। এছাড়াও জেলা শহরের বেশ কিছু জণগুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত সড়কের দু ধারে ফুটপাথে দোকানের মালামাল দোকানিরা রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। চিহ্নিত মাদককারবারীদের সামাজিকভাবে বয়কটেও আমাদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। সিভিল সার্জন তার বক্তব্যে নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খেজুরের কাঁচা রস এবং রস দিয়ে তৈরি তাড়ি কোনভাবেই পান করা যাবে না। তবে রস জ্বালিয়ে গুড় করে খাওয়া নিরাপদ। যারা খেজুর গাছের রস গাছ থেকে নামিয়ে জালায় ঢালেন তাদেরও একটু সতর্ক হতে হবে। রসে হাত লাগলে দ্রুত হাত ভালো করে ধুতে হবে। এছাড়াও তিনি নিপা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার জন্য একটি প্রচারপত্র সভায় বিতরণ করেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে দর্শনা পুরাতন বাজার রেলগেট বিড়ম্বনাসহ মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে বিশেষভাবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কালবাজারি বন্ধে বাস্তবমূখি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মাদকের বিষয়ে বলতে গিয়ে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শরিয়তউল্লাহ বলেন, জেলায় কর্মরত ইন্সপেক্টরসহ আমরা যারা দায়িত্বপালন করছি তারা সকলে আন্তরিক। ক’দিন আগে শিপরা নামের এক মাদক কারবারি ও তার সহযোগিকে ধরতে গভীর রাতে অন্ধকারে কবরস্তানেও আমাদের ওঁৎ পেতে থাকতে হয়েছে। এ অভিযানে আমরা সফল হয়েছি। মাদক বিরোধী অভিযান লাগাতারভাবে চলছে। মাহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে সম্প্রতি নেয়া পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেন।