সমাজকে নান্দনিক সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করতে সকলকে কর্তব্যপরায়ন হওয়া প্রয়োজন
চুয়াডাঙ্গা জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিকসভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান
স্টাফ রিপোর্টার: প্রজন্মকে ধৈর্য্য সহনশীল সুনগারিক হিসেবে গড়ে তুলতে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের আন্তরিক ও যত্মবান হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেছেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রক্তাক্ত হানা-হানী কোনো সভ্য সমাজের ছবি নয়। আইন শৃঙ্খলাই শুধু নয়, সমাজকে নান্দনিক সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করতে হলে সমাজের সকলকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করা প্রয়োজন।
গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাসহ কয়েকটি বিষয়ে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত আহ্বান জানান। তিনি গতমাসে বাঙালীর বৃহৎ সম্মিলিত আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। চুয়াডাঙ্গায় টানা তাপদাহসহ বৈরি আবহাওয়ার নানা দিক তুলে ধরে সড়কের দুপাশে এবং বাড়ির আঙিনায় থাকা গাছপালার ঝুকিপূর্ণ ডাল দ্রুততম সময়ে কেটে অপসারণের তাগিদ ঝড় বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে কম ক্ষতি করতে পারে সে লক্ষ্যে সকলকে সজাগ থাকার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠ সকল সংস্থা যথযথভাবেই দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হতবাক করলেও হতাশ হলে চলবে না। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সুচারুভাবে দায়িত্বপালন অবশ্যই চুয়াডাঙ্গার পরিবেশ প্রত্যাশিত পর্যায়েই থাকবে। বাল্যবিয়ে রোধসহ ধর্মান্ধত্বা পরিহারে সচেতনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এদিকে ঈমাম সামজকে বিশেষভাবে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে পথচারি, চালকদের আরও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গা ভায়া যশোর রোডে বাস চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে একটি সমস্যা জিইয়ে রয়েছে। ঝিনাইদহ ও যশোর জেলার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসনে আরও আন্তরিক প্রচেষ্টা চলানো হবে। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শতভাগ নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধে অনমনীয় অভিযান চলিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আপস চলবে না।
আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বক্তব্যে বলেন, গত মাসে কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে দুটি বাদে সকল মামলার আসামি শনাক্ত করে আইনে সোপর্দ সম্ভব হয়েছে। বাকি দুটি মামলার তদন্তেও অনেক দূর এগিয়েছে। সম্প্রতি একটি অপহরণের ঘটনা ঘটার সাথে সাথে দ্রুত অভিযান চলিয়ে অপহরককে কুমিল্লা থেকে যেমন গ্রেফতার করা হয়েছে। অপহৃতকেও উদ্ধার করা হয়েছে। ছোট খাটো অপরাধ প্রবণতা রোধে পুলিশ সর্বাদা সজাগ দয়িত্ব পালন করছে। পারিবারিক কিংবা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে হানাহানি হ্রাসে পারিবারিকভাবে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
সভায় বিজিবি-৬’র অধিনায়ক লে. কর্নেল সাঈদ মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান পিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বক্তব্যে বলেন, সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি অতন্ত্র প্রহরী। চোরাচালান রোধে বিরামহীন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্যের জন্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। সীমান্তের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে প্রয়োজন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক প্রচেষ্টা। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকসহ সকল প্রকার চোরাচালান রোধ করা সম্ভব। ৬ বিজিবি এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মাসিক আইন শৃঙ্খলা, জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাসহ অনুষ্ঠিত কয়েকটি সভায় উপস্থিত থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, দর্শনা পৌর মেয়র আতিয়ার রহমান, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, প্রচার সম্পাদক শওকত মাহমুদ. বিশেষ পিপি অ্যাড. আবু তালেব, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চুয়াডাঙ্গা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, জেলা মাহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাকসুদা জান্নাত, চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. শরিয়ত উল্লাহ, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান, চেম্বার প্রতিনিধি নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি প্রমুখ। সভায় চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়গুলোতে পঠন পাঠনের পূর্ণ পরিবেশ গঠনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।