সখের মোটরসাইকেল কেড়ে নিলো পাঁচ বোনের একমাত্র ভাইয়ের প্রাণ

দামুড়হুদা অফিস: পাঁচ বোনের এক ভাই রানা। ছিলেন বোনদের মধ্যমণি। পরিবারের সবার কাছে খুব আদরের ছিলো রানা। সেই রানা ইসলাম (১৮) সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে একে একে দেখেতে বোনরা ছুটে আসেন স্বামীর বাড়ি থেকে। বোনদের আর্তনাদে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি রানাকে এক পলক দেখতে আসা মানুষগুলো। রানা ইসলাম চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার রাজা মোল্লা ছেলে। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে রানা ছিলেন সবার ছোট। গতকাল বৃহস্পতিবার দুুপুরে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান রানা। গতকালই বাদ মাগরিব জানাজা শেষে বেদনাবিধূর পরিবেশে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পারিবারিকসূত্রে জানা যায়, রানা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও মহামারী করোনার কারণে তার মালয়েশিয়া যাওয়া পিছিয়ে যায়। একমাত্র ছেলে হওয়ায় তার দাবি দাওয়া সবকিছুই পূরণ করার চেষ্টা করতেন পিতা-মাতা। মাস দুয়েক আগে ছেলের আবদার পূরণ করতেই দ্রুত গতির টিভিএস ১৬০ সিসির ফোর-ভি মোটরসাইকেল কিনে দেন তার বাবা। বেপরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগে সপ্তাহখানেক আগে মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেন রানার মা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে মায়ের সাথে মন কষাকষি চলছিলো রানার। মঙ্গলবার রানাকে চড়-থাপ্পড়ও মারেন তার মা। এর জের ধরে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করবে বলেও হুমকি দেন রানা। উপায় না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলের হাতে মোটরসাইকেলের চাবি তুলে দেন তার মা। চাবি হাতে পেয়েই মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে রাস্তায় বের হয়েই দুর্ঘটনার শিকার হন রানা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে দামুড়হুদার দিকে যাচ্ছিলেন রানা। বেপরোয়া গতি বাড়ি থেকে মাত্র ৪শ মিটার রাস্তা গিয়েই প্রথমে একটি বাইসাকেলের সাথে ধাক্কা মেরে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের সামনে আছড়ে পড়েন। এতে মাথা, ঘাড় ও গলাই গুরত্বর আঘাত পান রানা। স্থানীয়রা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রানাকে মৃত ঘোষণা করেন। বুকে ও মাথায় প্রচ- আঘাত লাগায় রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আক্তার। একমাত্র পুত্রসন্তানকে হারিয়ে বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেক বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছেলেটি বাবা, মায়ের অবাধ্য ছিলো বলে জানতে পেরেছি। এছাড়াও সে একদিন আগে ঘুমের ওষুধ সেবন করেছিলো। আর ছেলেটিই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়। ছেলেটির পরিবারে পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগও করেনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More