লোকসান পুষিয়ে স্মরককালের রেকর্ড ভেঙে সাড়ে ৫০ কোটি টাকা লাভ
কেরুতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১শ সাড়ে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন
দর্শনা অফিস: দেশের সবগুলো চিনিকল যখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে গভীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখনো সরকারকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব দিয়েও মুনাফা অর্জন করেছে কেরুজ কমপ্লেক্স। কেরুজ কমপ্লেক্স বরাবরের মতো গত অর্থ বছরেও মুনাফা অর্জন হয়েছে ১ সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। সরকারের রাজস্ব খাতায় ৭৯ কোটি জমা দিয়েও মিলের দুটি বিভাগের ৬৪ কোটি টাকা লোকসান পুষিয়ে মূল মুনাফার খাতায় জমা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫০ কোটি টাকা। কেরুজ কমপ্লেক্স আরও লাভজনক করতে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখি পদক্ষেপ। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ চাষ করায় আগামী মাড়াই মরসুমে চিনি কারখানায় লোকসানের বোঝা কমতে পারে অনেকাংশে। কেরুজ কমপ্লেক্সের বয়স পেরিয়েছে ৮৪ বছর। জোড়াতালি দিয়েই বারবার আখ মাড়াই মরসুমের কার্যক্রম চালু করা হয়ে থাকে। খানেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোনোভাবে শেষ করা হয়ে থাকে আখ মাড়াই কার্যক্রম। লাগাতার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে নাজেহালে হতে হয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এদিকে আধুনিকায়ন করণ কাজ শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। কবে নাগাদ এ কাজ শেষ হবে তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারে না। চিনি কারখানার দশা যা হোক না কেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে প্রতি বছরের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র বেধে দিতে কমতি করেন না কর্তাবাবুরা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হোক বা না হোক বোঝা চাপিয়ে দিতে মোটেও ভুল হয় না করপোরেশনের। ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ৫০ মাড়াই দিবস শেষে বন্ধ হয়েছিলো ১২ ফেব্রুয়ারি। সর্বমোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমির আখ মাড়াই করা হয়। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমাণ ছিলো মাত্র ৯৮৯ একর ও কৃষকের জমিতে আখ ছিলো ৩ হাজার ৬৩৮ একর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাত্র ৪৪ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন নির্ধারন করা হয় সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা ছিলো ৭ দশমিক শূন্য। শেষ অবধি ৫০ দিবস আখ মাড়াই করা হয়েছিলো। আখ মাড়াই করা হয়েছিলো ৫৪ হাজার মেট্রিকটন। গড় মাড়াই ছিলো দিনে ১ হাজার ৬৪ মেট্রিকটন। চিনি উৎপাদন হয় ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড়হার ছিলো ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ১ জুন চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বোর্ড মিটিংয়ে উত্থাপিত তথ্যনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বছরে কেরুজ চিনি কারখানায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চিনিকলের ৯টি খামার। খামারগুলো অব্যবস্থানা ও দুর্নীতির আখড়াতে পরিণত হওয়ায় ফি বছরেই লোকসান গুনতে হয়। বরাবরের তুলনায় ব্যত্বয় ঘটেনি গত অর্থ বছরেও। অর্থাৎ এ অর্থ বছরে ৯টি খামারে লোকসান গুনতে হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ। এছাড়া আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানা লাভের আশায় পথ চললেও দিনদিন অবশ্য লোকসানের অংকটা কমছে। ফলে বরাবর লোকসান গুনলেও এ বছরে তা লাভে পরিণত হয়েছে। এবার ১৮ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন হয়েছে আকন্দবাড়িয়া জৈব সার করখানা থেকে। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরে কেরুজ কমপ্লেক্স ৪ টি বিভাগের মধ্যে চিনি কারখানা, ৯ টি খামারে লোকসান গুনেছে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ দিকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ডিস্টিলারী, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও বায়োফার্টিলাইজার বিভাগ থেকে। ৫৫ লাখ প্রুপলিটার দেশি ও বিদেশী মদ উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়েছে। এবার ১ লাখ ১৬২ হাজার কেস বিদেশী মদ বিক্রি করে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগ। ডিস্টিলারি বিভাগ থেকে সরকারকে ৭৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব ও কোটি টাকায় আয়কর দিয়েও মুনাফা অর্জন হয়েছে ১শ ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বায়োফার্টিলাইজারে ভিনেগার উৎপাদনে মুনাফা অর্জিত হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। সর্বমোট মুনাফা অর্জন থেকে ওই অর্থ বছরে সরকারের রাজস্ব খাতায় ভ্যাট ও শুল্ক খাতে জমা দিতে হয়েছে ৭৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্জিত মুনাফার ১শ ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মধ্যে ৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা চিনি কারখানা, ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ৯ টি খামারের লোকসান পুষিয়ে ৫০ কোটি ২৭ লাখ টাকা লাভের মুখ দেখেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সাড়ে ২৮ কোটি। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি কেরুজ কমপ্লেক্স। সর্বক্ষেত্রে কেরুজ চিনিকলের রয়েছে অবদান। সরকারের এ মূল্যবান সম্পদ গর্বিত ও সমৃদ্ধ করেছে এ জেলা তথা দর্শনাকে। তাই এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যতম কাচামাল আখচাষ বাড়ানো খুবই জরুরি। কেরুজ কমপ্লেক্সে যে যেখানে যে যে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরকে নিষ্ঠা, আন্তরিকতার মধ্যদিয়ে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। তাহলেই রক্ষা পাবে চিনি কারখানা, এ অঞ্চল ফিরে পাবে সোনালী অতীত। তাই আসুন কেরুজ চিনিকলকে বাঁচাই নিজেদের স্বার্থে।