লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
স্টাফ রিপোটার: একযোগে সারা দেশে বুধবার থেকে শুরু হওয়া আট দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’-এর কঠোর বিধিনিষেধে একরকম অচল প্রায় সারা দেশ। প্রথম দু’দিন সরকারের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়া মতো। শিল্পকারখানাসহ জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ ছিলো সবকিছুই। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ দেশের প্রায় সব নগর ও মহানগরের প্রধান সড়কগুলো ছিলো একেবারেই ফাঁকা। তবে বিধিনিষেধের প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে মানুষ ও যানচলাচল বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের দ্বিতীয় দিন পার করে আজ পড়েছে তৃতীয় দিনে। অনেককে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। গত বুধবার সকাল থেকে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বৃহস্পতিবার অনেক কৌতূহলী মানুষ বের হচ্ছেন। ফলে লকডাউনে দ্বিতীয় দিনে নতুন করে কঠোর অবস্থান নিয়ে নজরদারি করছে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ-প্রশাসন। জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারিসহ সবধরনের অফিস, গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ মাঠ পর্যায়ে নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের চৌরাস্তার মোড়, একাডেমি মোড়, কোর্ট মোড়, বাস টার্মিনাল, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। যারা অপ্রয়োজনে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হয়ে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান জানান, অনেকেই বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। কী কারণে বের হয়েছেন এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে যারা পারছেন তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর যারা সদুত্তর দিতে পারছেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়াও কাঁচা বাজারে সামাজিক দূরুত্ব না মানায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ খান জানান, সকাল থেকেই সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনেকেই অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠাচ্ছি। এছাড়া কেউ যেন দোকান, মার্কেট খোলা না রাখে সেদিকেও খেয়াল রাখছি।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বুধবার থেকে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন চলছে সারাদেশে। লকডাউনের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের সড়ক ছিলো ফাঁকা। যদিও বৃহস্পতিবার ও রোববার আলমডাঙ্গার সাপ্তাহিক হাটবার। এ দু’দিন শহরে প্রচ- ভিড় হয়ে থাকে। লকডাউনের দুু’দিনই সড়কে মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেল ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ বেশ কিছু ভ্যান ও মোটরসাইকেল জব্দ করেছে। শহরে কয়েকটি প্রবেশ মুখে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। কিছু মুদি দোকান ছাড়া সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শুধুমাত্র ওষুধ ও হোটেলগুলো খোলা রয়েছে। তবে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সবজি বাজারে। লকডাউন কার্যকরী করতে সকাল থেকে মাঠে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার ম-ল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর ও থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা লকডাউনে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছেন তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করেছেন।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারে রমজানের কেনাকাটা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি বা দূরত্ব মেনে ক্রেতাদের চলাচল ও কেনাকাটা করতে দেখা যায়নি। অনেককে মাস্ক পড়তেও দেখা যায়নি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাঁচাবাজার ও ফুটপাতের দোকানসহ কয়েকটা হরেক রকমের দোকানগুলোতে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। আবার দোকানের সাটার বন্ধ করে দোকান মালিকরা দোকানের সামনে অবস্থান করছে। কেউ কেউ দোকানের ভেতর অবস্থান করছে। ক্রেতারা আসলেই দোকানের ভেতর ঢুকে নিচ্ছে। প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও মানুষের মাঝে করোনা সংক্রান্ত কোনো ধরনের ভয় বা ভীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে করোনা নামে কোন কিছু নেই। স্বাভাবিক সময়ের মতো মানুষ চলাচল করছে বাজারগুলোতে। রাস্তায় অটোগাড়ি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। রাস্তাঘাটে মানুষের পদচারণা ছিলো চোখে পড়ার মতো। কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বললে জানান, রমাজানের কারণে তারা বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে তাদের বাজারে আসতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, রমজান মাসের কারণে ক্রেতারা বাজারে এসেছেন। গত কয়েক দিনের চেয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্রেতাদের চাপ দেখা গেছে। কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক পরলেও অনেকেই মাস্ক ছাড়া বাজারে এসেছেন। কয়েকজন দোকানপাট মালিকরা বলেছেন, আজ (বৃহস্পতিবার) হাটের দিন তাই ভিড় হচ্ছে। এদিকে জনসচেতনতায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দামুড়হুদা থানা পুলিশ মাঠে নেমে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে সটকে পড়ছে চলে গেলে আবারো এসে পড়ে এমন অবস্থা। সচেতন মহল বলেন, বাজারে মানুষের চাপ কমাতে হলে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেহেরপুর শহরের কোর্ট এলাকা থেকে শুরু করে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মোড়, হোটেল বাজার মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, বড়বাজার এলাকা, বড়বাজার মোড়সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন দাশগুপ্ত’র নেতৃত্বে পুলিশের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক অভিযান চালান। অভিযান চলাকালে অযাথা বাড়ির বাইরে আসতে নিষেধ করা হয়। একই সাথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে না আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এদিকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মেহেরপুর পুলিশের উদ্যোগে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
এদিন দুপুরের দিকে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালানো ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। মেহেরপুর পুলিশের সদস্যরা মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ মোড়, বড়বাজার এলাকাসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা চালায়। এসময় মাস্ক বিহীন বাইরে না আসার আহ্বান জানানো হয়।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকার ঘোষিত তৃতীয় বারের লকডাউনের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার মানুষকে ঘরে রাখতে মেহেরপুরের গাংনীতে প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে। বিশেষ করে গাংনী উপজেলা শহরের সড়কগুলো ছিলো ফাঁকা। মানুষ ও যানবাহন চলাচল নেই বললেই চলে। তবে জরুরি প্রয়োজনে সীমিত সংখ্যক মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে লকডাউন চলাকালীন বিধি-নিষেধ যাতে মানুষে মেনে চলতে পারে সে লক্ষ্যে গাংনী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা শহরে তৎপরতা দেখা গেছে। তবে লকডাউনের ফলে কর্মজীবী মানুষগুলো কর্মস্থলে না যেতে পেরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। গাংনী পৌর এলাকার বাসিন্দা মোকাদ্দস আলী জানান, গাংনী উপজেলা শহরে অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। এ লকডাউনের কারণে অটোভ্যান বন্ধ। তাই এখন আমার সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে করােনা ভাইরাস থেকে মানুষ যেনো নিরাপদে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে গাংনী শহরে পথচারীদের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়েছেন গাংনী পৌরসভার মেয়র আহম্মেদ আলী।