স্টাফ রিপোর্টার: লকডাউনের খবরে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করেই গতকাল রাজধানীর সড়কে মানুষের স্রোত দেখা যায়। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও কমলাপুর রেল স্টেশনে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদের বেশিরভাগের মধ্যেই ছিলো না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই। রাজধানীর যানবাহনগুলোতে অর্ধেক যাত্রী উঠানোর যে নির্দেশনা রয়েছে তাও মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, সিএনজি, রিকশায় করে মানুষ ছুটতে থাকে নগরীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। লোকজন টিকিটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকে টিকেট পাচ্ছেন না বলেও ছিলো নানা অভিযোগ। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও সিলেটের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। গতকাল মহাখালী বাস টার্মিনালে ছিলো ঘরে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মহাখালী বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা সাহেদ আলী জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে কয়েক দিন ধরে বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এতে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে লকডাউন ঘোষণার পর হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।
সায়েদাবাস বাস টার্মিনালের একাধিক পরিবহনের কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ৪০-৫০ আসনের গাড়িগুলো ২০-২৫ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির কথা বললেও গাড়িগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে দ্বিগুন পরিমাণ। তবে গতকাল দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও সিট মিলছে না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একেকজন বাসে উঠতে পারছেন। প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে কমলাপুর বাস কাউন্টারগুলোতেও। আর যাত্রাবাড়ী এলাকা তো মোটামুটি থমকে আছে। সড়কে গাড়ির চাপও আজকে অনেক বেশি। অপরদিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন একটা ভিড় নেই। তবে টার্মিনাল সংশি¬ষ্টরা জানান, গাবতলী টার্মিনাল থেকে মূলত দূরপাল¬ার বাস বিশেষ করে রাজশাহী, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম বুড়িমারী ও নীলফামারীর দিকে ছেড়ে যায়। সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যার পর বেশিরভাগ বাস ছেড়ে যায়। তাই দুপুরের দিকে যাত্রীদের ভিড় কম থাকলেও বাসের টিকিট সব শেষ হয়ে গেছে। গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আব্দুল আউয়াল জানিয়েছেন, অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করায় এমনিতেই আসন সঙ্কট ছিলো গাড়িগুলোতে। গতকাল রাস্তায় বাড়তি যাত্রীর চাপ থাকায় এই সংকট আরো ঘণীভূত হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিলো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনে যাত্রীদের গাদাগাদি করে উঠতে দেখা গেছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সকলেই ছুটছেন বাড়ির দিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেন রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে। সবাইকে নিরাপদ রাখতেই আগেভাগেই পরিবারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। সন্ধ্যার দিকে বেশিরভাগ লঞ্চ ছেড়ে যায় সদরঘাট থেকে। কিন্তু তার আগেই যাত্রীরা সদরঘাটের দিকে ছুটেছেন। সদরঘাটমুখী যাত্রীদের ঢল এতটাই যে গুলিস্তান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত যানজট দেখা দেয়। বাস থেকে নেমে অনেকে হেঁটেই সদরঘাটের দিকে ছুটছেন। লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা শুয়ে-বসে, ঘেঁষাঘেঁষি করে অবস্থান করছেন। মুখে মাস্ক পরা থাকলেও যাত্রীরা লঞ্চের মধ্যে জট বেঁধে অবস্থান করছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ