রোগী হয়রানি ও অনিয়ম, জরুরি বিভাগের সকল স্বেচ্ছাসেবক ছাঁটাই
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে গায়েব হওয়া আইপিএস উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আইপিএস গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় আইপিএসটি উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করেছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও জরুরি বিভাগে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগে সকল স্বেচ্ছাসেবককে ছাঁটাই করে দিয়েছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, যে কোন সময় জরুরি বিভাগ থেকে সরকারি আইপিএসটি গায়েব হয়ে যায়। গতপরশু শনিবার বিষয়টি নজরে আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। এরপরই শুরু হয় অনুসন্ধান। হাসপাতালজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশের তৎপরতায় এক ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দিয়ে যায় আইপিএসটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উজ্জ্বল নামে এক স্বেচ্ছাসেবক আইপিএসটি চুরি করেছিল। গতপরশু শনিবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের তৎপরতায় এক ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দিয়ে যায় উজ্জ্বল।
জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চার শিফটে মোট ৩৫ স্বেচ্ছাসেবক রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। ছাঁটাই করে দেয়ার খবরে অনেক স্বেচ্ছাসেবককে ক্ষোভে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আইপিএস চুরির ঘটনা কেন্দ্র করেই আমাদের সকলকে কাজে আসতে মানা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করলেও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। একজনের কারণে আমাদের সকলের ওপর চাপিয়ে দেয়া এটা অন্যায়। যদি উজ্জ্বল এটা চুরি করে তাহলে তার পক্ষে একার কাজ নয়। তার সঙ্গে আরও দুজন ছিল বলে শোনা যাচ্ছে। উজ্জ্বলের নাম প্রকাশ করলেও বাকি দুজনের নাম প্রকাশ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এটা দুঃখজনক। এদিকে ২৩ জানুয়ারি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে লেখা না থাকলেও ২ রোগীকে কৌশলে ক্যাথেটার (মূত্রথলি থেকে মূত্র বের করতে সাহায্য করে) লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে সজিব ও শাহনাজ নামে এই দুই স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে। ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকেই দুই রোগীর প্রচ- জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হয়। পরে বাধ্য হয়ে নিজেরাই খুলে ফেলেন। এরপর থেকেই দুই রোগীর পুরুষাঙ্গ থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। প্রচ- যন্ত্রণায় কাথরাতে থাকেন তারা। এনিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে পরদিন সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এই দুই স্বেচ্ছাসেবককে ডিউটিতে আসতে নিষেধ করে দেন। তবে কয়েকদিন পর থেকে তাদের ডিউটি করতে দেখা যায়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, জরুরি বিভাগ থেকে আইপিএসটি উজ্জ্বল নামে এক স্বেচ্ছাসেবক চুরি করেছিল। বিষয়টি আমার নজরে আসলে পুলিশের হস্তক্ষেপে এক ঘণ্টার মধ্যে আইপিএসটি ফেরত দিয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবক। তিনি আরও বলেন, জরুরি বিভাগের রোগীদের থেকে জোরপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হয়রানিসহ অনিয়মের অভিযোগে সকল স্বেচ্ছাসেবকদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেন না। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। এ কারণে আমরা জরুরি বিভাগে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবকদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এখন থেকে সরকারি স্টাফ এবং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে জরুরি বিভাগে সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. আতাউর রহমান বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে না থাকলেও ২ রোগীকে কৌশলে ক্যাথেটার দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই স্বেচ্ছাসেবককে বাদ দেয়া হয়েছিল। আবারো ডিউটিতে যোগদান করার প্রশ্নই আসেনা। তারা কিভাবে ডিউটি করছে এটাও আমার জানা নেই। আগামীকাল (আজ) খোজ নিয়ে বিষয়টি দেখবো। হাসপাতালে কোন অনিয়ম সহ্য করা হবেনা।