ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ভেতরে রোগী রেখেই ক্লিনিকে তালা
চুয়াডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জরিমানা (ভিডিও)
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সড়কে অবস্থিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যাল ও ইনজেকশন সংরক্ষণের দায়ে একটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে পাঁচ হাজার করে মোট দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্স না থাকা, জনবল সংকট, অনুমোদনের অতিরিক্ত বেড, অস্ত্রোপাচার কক্ষ (ওটি) অপরিছন্ন থাকায় সেবা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে ১৫ দিনের মধ্যে সংশোধনের সুযোগ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতাল সড়কে পাঁচ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সহযোগিতায় ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তারেক জুনায়েদ ও সদর থানা পুলিশের একটি চৌকস দল।
এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে হাসপাতাল সড়কের কিছু ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বন্ধ করে করে পালিয়ে যায়। এছাড়া চিকিৎসা সেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আসা গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে রোগীদের আটকে ম‚ল ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে সটকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় প্রায় এক ঘণ্টা আটকে থাকে ২০-৩০ জন রোগী। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর পুনরায় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টার চালু করতে দেখা যায়।
শারমিন শিলা নামে এক রোগীর বলেন, দুপুর ১টার দিকে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে এক্স-রে করতে এসেছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরই প্রতিষ্ঠানের ম‚ল ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। আমরা ২০-৩০ জন সেবা নিতে আসা রোগীরা ভেতরে আটকা পড়ি। প্রায় এক ঘণ্টা পর তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানটির লোকজন। পরে জানতে পারি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণেই তালাবদ্ধ করা হয়েছিলো। অভিযান চালানো হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় আব্দুল্লাহ ডায়াগণস্টিক সেন্টার, ইউনাইটেড ক্লিনিক, একতা ক্লিনিক, মদিনা ক্লিনিক ও দেশ ক্লিনিকে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, সদর হাসপাতাল সড়কের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অস্ত্রোপচার রুমে অবস্থিত ফ্রিজে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন (অবশ করার) রাখার অপরাধে মদিনা ক্লিনিককে ৫ হাজার টাকা ও আব্দুল্লাহ ডায়াগণস্টিক সেন্টারে মেয়াদোত্তীর্ণ প্যাথলজিক্যাল কেমিক্যাল সংরক্ষণ করার অপরাধে প্রতিষ্ঠান মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সব থেকে দেশ ক্লিনিকের মান দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ক্লিনিক মালিক সমিতির চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর হক লাবলু বলেন, চিকিৎসক সংকটে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখা সম্ভব হয় না। আমরা সবসময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে আসছি সরকারের নীতিমালা অনুসরণের। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মাজহারুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গায় গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। বেশিরভাগ ক্লিনিক সরকারি নীতিমালা মানছে না। পরিবেশগত দিক থেকেও অনেক সমস্যা আছে। অভিযানের প্রথম দিনে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। বাকিদের লাইসেন্সের শর্তাগুলো পালনে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যে ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখে তালাবদ্ধ করে চলে গেছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালানো হবে।