স্টাফ রিপোর্টার: রমজান মাসে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে হঠাৎ করেই চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে খাজানগর মিলগেটে প্রতি কেজি চালের দাম কমেছে ৩ টাকা পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাওর অঞ্চল থেকে কয়েকটি মোকামে নতুন ধান আসা, পুরোনো চালের কেনাবেচা না থাকা, ব্যবসায়ী, পাইকার ও ফড়িয়াদের কাছে প্রচুর ধান-চালের মজুত, রমজানে ভাতের ওপর চাপ কমা, খোলা বাজারে কম দামে চাল বিক্রি এবং আমদানিকৃত চালের কারণে বাজারে প্রভাব পড়ছে। ঈদের আগে হাওরের ধান কাটা পুরোদমে শুরু হলে চালের বাজারে আরও প্রভাব পড়বে। ঈদের পরপর চালের দাম তখন আরও কমতে পারে।
খাজানগর মোকামের কয়েকজন মিল মালিক জানান, রমজান শুরুর আগেও চালের বাজার স্থিতিশীল ছিলো। কিন্তু রমজান শুরুর পর মোকামে চালের বিক্রি আগের তুলনায় অর্ধেকের নিচে নেমেছে। বিক্রি ও নতুন অর্ডার তেমন না থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে চালের। গত বৃহস্পতিবার মিলগেটে সরু চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৩ টাকা। অথচ ১০ দিন আগেও দাম ছিলো প্রতি কেজি ৬৬ টাকা। এ ছাড়া হাসকিং মিলের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে আরও ২ টাকা কমে ৬০ টাকায়। একইভাবে যে বাসমতি চালের কেজি রমজানের আগে ছিলো ৭৫ টাকা, সেটা এখন মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। আটাশ, ধানি গোল্ড, কাজললতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে; যার দাম কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা। ৩৯ থেকে ৪১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মোটা চালের কেজি। গত ১৫ দিনে সব ধরনের ধানের দামও কমেছে মণপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এখন নতুন সরু ধান অল্প পরিমাণে বাজার উঠতে শুরু করেছে। সেই ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ টাকায়। অথচ কয়েক মাস মানভেদে সরু ধানের মণ ছিলো এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, মোকামগুলোতে চালের দাম কমিয়েছে মিল মালিকরা। এ ছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত ধান ও চাল মজুত আছে। তবে কেনাবেচা অনেক কম। এসব কারণে প্রতি বস্তা চাল ৩ থেকে ৪ টাকা কমে বিক্রি করছেন তারা। ২৫ কেজির যে সরু চাল কিছুদিন আগে ৬৩ টাকা দিয়ে কিনে ৬৬ টাকায় বিক্রি করছিলেন; তা এখন বিক্রি করছেন ৬৪ টাকায়। একইভাবে আটাশসহ অন্যান্য চালের দাম কমে এখন ৫০ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। চালকল মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও মিয়া অটো রাইস মিলের মালিক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘মোকামে এখন চালের কেনাবেচা একেবারে নেই বললেই চলে। পাইকারসহ ব্যবসায়ীদের ঘরে পর্যাপ্ত চাল মজুত আছে। এর মধ্যেই নতুন ধান মোকামে আসতে শুরু করেছে। পুরোনো ধান-চালেরও কোনো সঙ্কট নেই। পাশাপাশি আমদানির কারণে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ঈদের পর চালের দাম আরও কমে আসবে।’
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার মধ্যে চালের দাম কমছে, এটা ভালো খবর। যে পরিমাণ বোরো ধান আবাদ হচ্ছে, ফলন ভালো হলে এর বড় প্রভাব চালের বাজারে পড়বে। ক্রেতারা তখন সব ধরনের চাল কম দামে কিনতে পারবেন।