স্টাফ রিপোর্টার: হতদরিদ্র অসুস্থ পিতার সংগ্রামী কন্যা মাদরাসা ছাত্রী মাসুমা আক্তারের মৃতদেহ দাফন করা হয় সন্ধ্যায়। সকাল হওয়ার আগেই পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী কালামকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ। ঘটনার পর অল্প সময়ের মধ্যে আসামি গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করায় পুলিশকে যেমন সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে, তেমনই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনড় রয়েছে এলাকাবাসী।
পুলিশ বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়ার মাসুমা আক্তার আত্মহত্যা মামলার মূল আসামি পার্শ্ববর্তী আরামপাড়ার আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম আরও বেশ ক’টি মামলার আসামি। তাকে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কালাম উত্ত্যক্ত করার কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও তার সাথে প্রেমজ সম্পর্ক ছিলো বলে জানিয়েছে। ঘরে বউ থাকতেও কিশোরীকে বিয়ের জন্য চাপ কেন? কজন বউ লাগে? এসব প্রশ্নের জবাবে অবশ্য মাথানিচু করে থেকেছে কালাম। গতকালই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। পুলিশি প্রহরায় তাকে জেলহাজতে নেয়া হয়। কালামকে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হতে পারে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এরকমই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গার চাঞ্চল্যকর এই আত্মহত্যার প্ররোচণার প্রধান আসামি কালাম জেলা শহরের আরামপাড়ার মোবারক হোসেনের ছেলে। তাকে গ্রেফতারের পর গতকাল সকাল ১১টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আবুল কালাম আজাদ ওরফে কলামের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র ও দ্রুত বিচার আইনে, মারামারিসহ কমপক্ষে ৬টি মামলা রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ওসি আরও জানান, মাসুমা ও কালামের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কালাম বখাটে ও মাদকাসক্ত। মাসুমা স্থানীয় একটি মাদরাসার আলিম ১ম বর্ষ (একাদশ) শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বাবার চা, মুদির দোকানেও বসতো। এই দোকানে বসা কালাম মেনে নিতে পারেনি। সেখানে আসা ছেলে ক্রেতাদের সাথে কথা বলাও পছন্দ করতো না কালাম। এ কারণে বেশ কয়েকবার শাঁসায় মাসুমাকে। এই ছেলের সাথে কথা বলাকে কেন্দ্র করেই গত ১৮ মার্চ দোকানে সবার সামনে মাসুমাকে চড়-থাপ্পড় মারে কালাম। এতে রাগে-ক্ষোভে-অপমানে ঘটনার দুদিনের মাথায় ২০ মার্চ বিকেলে হকপাড়াস্থ নিজবাড়ি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মাসুমা। আত্মহত্যার পরপরই পালিয়ে যায় কালাম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই মাসুদ রানা ও এএসআই ইলিয়াস হোসাইন মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশের সহায়তায় আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন আরও বলেন, ‘কালামের বিরুদ্ধে কথা বললে সে যখন তখন কোপাতো। ২০২০ সালে সদর হাসপাতাল চত্বরে ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব রিগান ও তার মামা কৃষকলীগ নেতা মহসীন রেজাকে কুপিয়ে জখম করে। কালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ